Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি: আম একটি সুস্বাদু মৌসুমী ফল। সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি আমের সুনাম রয়েছে দেশ-বিদেশে। প্রতিবছর তাই সাতক্ষীরার আম রপ্তানি হয়। করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে গতবছর আম বিদেশে রপ্তানী না হলেও এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হওয়ায় এবছর ইউরোপের দেশ জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে রপ্তানি হবে সাতক্ষীরার আম।

ওই লক্ষকে সামনে রেখে প্রথমধাপে রোববার হতে শুরু হয়েছে গাছ থেকে আম সংগ্রহ। আমচাষীরা ও আড়ৎদাররা তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন আম সংগ্রহ ও রক্ষনাবেক্ষণের কাজে।

ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন…..

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলার ৭ উপজেলায় ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত ১৪ হাজার আমচাষী সাড়ে ৫ হাজার আমবাগানে আম চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। ১ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগসহ আগামজাতের আম বাজারজাত করার জন্য আমচাষীদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২১ মে থেকে হিমসাগর আম, ২৭ মে থেকে ল্যাংড়া আম ও ৪ জুন থেকে আম্রপালি আম বাজারজাত করা যাবে।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের ঝাপাঘাট এলাকার আমচাষী নজরুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে আমচাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে ট্রেনিং নিয়ে আমরা এই আমচাষ করেছি। বৃষ্টি না হওয়ায় তাপের কারণে আম কিছুটা ঝরেছে তবুও এ বছর আম ভাল হয়েছে। কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে আমরা এবার ভালো দামে আম বিক্রি করতে পারবো।

সাতক্ষীরার কুশখালী এলাকার আমচাষী বকুল হোসেন বলেন, গতবছর আম্ফানের কারণে বাগানের সব আম ঝরে যায়। অনেকগুলো গাছ ভেঙে যায়। এবছর এখনো ঝড়বৃষ্টি হয়নি। এবছর আম বিক্রি করে আমরা লাভবান হবো বলে আশা করছি।

কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, কলারোয়া উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। ৯ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন আম আমরা হারভেস্ট করতে সক্ষম হবো। ১ মে হতে লোকাল জাতের গোবিন্দভোগ, গোপাল কায়েস, গোপাল ভোগ হারভেস্ট করা শুরু করেছি। আগামী রোববার হতে আমরা আম হারভেস্ট করে প্রথম চালান ইউরোপের দেশ জার্মানীর ফ্রান্কফুটে রপ্তানী করবো। আম যেহেতু বিদেশে রপ্তানি হবে সেহেতু ফরমালিন, কার্বাইড বা কোন অসৎ উপায় অবলম্বন করে আমগুলো যাতে না পাকায় সেই পরামর্শ দিয়েছি এবং সেটা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। এছাড়া একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর গাছে থেকে আম সংগ্রহরে জন্য কৃষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্দিষ্ট সময়ের আগে কোনো চাষী আম বাজারজাত করবেনা জানিয়ে সাতক্ষীরা জেলা আমচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি লিয়াকত হোসেন বলেন, ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোপালখাসসহ বিভিন্ন জাতের আম বিদেশে রপ্তানি হয়। গতবছর বাজারে আম ওঠার ঠিক আগ মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে সব নষ্ট হয়ে যায়। এ বছর কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হওয়ায় আমের ফলন ভালই হয়েছে। ইতিমধ্যে এ বছর কয়েকটি কোম্পানি বিদেশে আম রফতানির জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা তাদের মান অনুযায়ী আম সরবারহ করতে পারবো। জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে জেলার প্রায় সব চাষীর আমের বাগান ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গতবছর বিদেশে আম রফতানি হয়নি। তবে এবার ১৪টি কোম্পানি বিদেশে আম রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে। তারা জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের সুপারশপগুলোতে সাতক্ষীরার আম পৌঁছে দেবে। ইতিমধ্যে ওই কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে আমাদেও বৈঠক হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ৫০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *