নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা শহরের লাবনী মোড় একটি জনবহুল এলাকা। করোনা মহামারি প্রতিরোধে গেল বছর এই মোড়ের পশ্চিম পাশে ৩০ হাজার ১০০ টাকা ব্যয়ে একটি হাত ধোঁয়া বেসিন নির্মাণ করে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে সেই বেসিনে এখন আর কেউ হাত ধোঁয় না। আর হাত ধোঁবেই বা কি করে? ভেঙে গেছে বেসিনের ট্যাব। নেই হাত ধোঁয়ার পানি ও সাবান। একই অবস্থা সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের সামনে নির্মিত বেসিনটিরও।
এছাড়া সাতক্ষীরা থানার অভ্যন্তরে ও সোনালী ব্যাংকের সামনে নির্মিত বেসিনের পানি থাকলেও নেই সাবান। লিকুইড সাবানের পাত্রটিও নষ্ট। অপরিস্কার আর অবহেলায় পড়ে আছে বেসিনগুলো। সাতক্ষীরা জেলায় নির্মিত অধিকাংশ বেসিনের অবস্থা ঠিক একই রকম।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত বছর সাতক্ষীরা জেলার ৭ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ জনসমাগম ঘটে এমন এলাকায় ৩১ টি বেসিন নির্মিত হয়। প্রতিটি বেসিন নির্মাণে খরচ হয় ৩০ হাজার ১০০ টাকা। সেই হিসেবে ৩১ টি বেসিন নির্মাণে খরচ হয় ৯ লক্ষ ৩৩ হাজার ১০০ টাকা। নির্মানের সময় সংশ্লিষ্টদের কিছু সাবান দেওয়া হয়েছিল সেসময়।
লাবনী মোড় এলাকার দোকানদার রাজু সকাল হতে রাত পর্যন্ত তার বিকাশের দোকানে থাকেন। বেসিনের ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বেসিনটি তৈরীর পর কিছুদিন ব্যবহার হয়েছিল। এখন ওটাই পানিও নেই, সাবানও নেই। পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মানুষ হাত ধুতে এসে ফিরে যায়। ফাও গর্ভমেন্টের টাকা অপচয় হয়েছে! এখন আর কোন কাজে লাগেনা ওটা।
একই এলাকায় কম্পিউটারের দোকানদার প্রতিবন্ধী বায়েজীদ হাসান। তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে হাত ধোয়ার বেসিন করেছে তা পানি নেই, সাবানও নেই!আমরা টার্গেট করেছি করোনা ঠেকাবো। তা কিভাবে ঠেকাবো? হাত ধোয়ার পানি নেই, সাবানও নেই, তবে বেসিনটা আছে। আপনি এটাই দেখবেন আর সান্ত্বনা পাবেন।দেখেই যদি বুঝতে পারে এখানে হাত দোয়ার পানি নেই, সাবান নেই তাহলে কি কেউ এখানে আসবে? যিনি করেছিলেন তিনি উদ্বোধনের সময় হয়তো এসেছিলেন। এরপর আর কেউ এখানে এসেছিলেন বলে মনে হয়না।
সাতক্ষীরা শহরের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম ‘সাতক্ষীরা ভিশন’কে বলেন, জিনিসটা অকেজো হয়ে পড়ে আছে এখানে। এটা ভেঙে ফেলা ছাড়া কোন লাইন নেই। যে-ই আসে সে-ই বেকুব হয়ে ফিরে যায়। ধূলাবালি পড়ে সব অকেজো হয়ে গেছে। যাদের দেখভাল করার কথা তারা আর এটার দিকে ফিরেও তাকায় না। হাত ধোয়ার সাম্পল হিসেবে শুধু বানিয়ে রেখেছে এটা।
শহরের ইজিবাইক চালক নুরুল গাজী ‘সাতক্ষীরা ভিশন’কে বলেন, পানি থাকেনা, সাবান থাকেনা। আমরা বেকুব হয়ে চলে যায়। কি জন্য বানিয়েছে এটা? হাত ধূতে এসে পানি না পেয়ে অনেকেই রাগে গালাগালি দিতে দিতে চলে যায়। একেবারে ফালতো এটা।
এ ব্যাপারে জানার জন্য সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যালয়ে ২ দিন যাওয়ার পরও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চাননি কোন কর্মকর্তা। তবে ক্যামেরা ছাড়াই ওই প্রকল্পের ঠিকাদার শহরের ইটাগাছা এলাকার বাবুল বলেন, ওখানে সাবান দিলে চুরি হয়ে যায়। এজন্যে আর সাবান দেওয়া হয়না। বেসিন নির্মাণ করার দায়িত্ব ছিল আমাদের। আমরা সেটি করেছি। নির্মাণের পর আমরা কিছু সাবান সেখানে দিয়েছিলাম। যেখানে নির্মিত হয়েছে ওখানের সংশ্লিষ্ঠরা এখন সাবান পানির ব্যবস্থা করবেন।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী(অতিরিক্ত দায়িত্ব) জাহিদ পারভেজ বলেন, আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। এ ব্যাপারে আমি বিস্তারিত কিছুই জানিনা। তবে এমন হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন হুসাইন সাফায়েত ‘সাতক্ষীরা ভিশন’কে বলেন, ওটা আমাদের অধিনে না। এজন্য ওই ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবোনা।