Spread the love

এসভি ডেস্ক: বছরজুড়ে করোনার অভিঘাতে সরকারের নানা পরিকল্পনায় ওলটপালট চলছে। করোনা মোকাবিলায় বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। দেশে করোনা সংক্রমণের ৯ মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পরিস্থিতি এখনও শিথিল হচ্ছে না। এখনও প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এরইমধ্যে করোনার নতুন সংক্রমণের খবরে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। 

করোনার ছোবল দেশের অর্থনীতির জন্যও বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। আমদানি-রফতানিতে শৈথিল্য দেখা দিয়েছে। গতি হারিয়েছে সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। এরইমধ্যে জানা গেল, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে দেড় লাখ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। নভেম্বর পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ এই অতিরিক্ত তারল্য ২ লাখ কোটি টাকা ছুঁতে পারে বলে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। 

বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতিতে পোর্টফোলিও বড় হলেও দুর্বল হচ্ছে ব্যাংকের ভিত। কারণ, টাকার ঘাটতি যেমন বড় বিপদ, তেমনই বিনিয়োগ থেমে গিয়ে অতিরিক্ত তারল্য সৃষ্টিও সমান বিপদ। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিনিয়োগ বাড়বে, তখন এই অলস টাকা আর অলসভাবে পড়ে থাকবে না বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট তারল্যের পরিমাণ ৩ লাখ ৭১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের হাতে রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৮৩ কোটি, বিশেষায়িত ৩ ব্যাংকের হাতে ১ হাজার ৩১২ কোটি, বেসরকারি (কনভেনশনাল) ৩৪ ব্যাংকের হাতে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩৮ কোটি, ইসলামিক ৮টি ব্যাংকের (বেসরকারি) হাতে ৪২ হাজার ৪৬২ কোটি এবং বিদেশি ৯টি ব্যাংকের (বেসরকারি) হাতে অলস পড়ে আছে ৩৩ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। 

অপরদিকে ব্যাংকিং নীতি অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব ব্যাংকের ২ লাখ ২ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকার ন্যূনতম তরল অর্থ সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মোট তারল্য থেকে উল্লিখিত অংক বাদ দিলে যা থাকে সেটাকেই অতিরিক্ত তারল্য বা অলস টাকা ধরা হয়। সেই হিসাবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য বা অলস টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। 

ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণ খেলাপি ক্রমশ বাড়ছে। যে ঋণ দেয়া হয়েছিল তা ফেরত আসছে না। ফলে ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড় সৃষ্টি হবে- এটাই স্বাভাবিক। দেশে বিনিয়োগ নেই, আমদানিও নিম্নমুখী। নতুন শিল্পকারখানাও গড়ে উঠছে না। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো যথেষ্ট চিন্তিত ও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই করোনা মহামারির সময়ে ভালো গ্রাহকরা ঋণ নিতে চাইছেন না। বিপরীতে যারা ঋণখেলাপি তারা নতুন করে আরও ঋণ নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। নতুন করে ঋণ না দিলে খেলাপিদের কেউ কেউ আগের ঋণ পরিশোধ না করারও হুমকি দিচ্ছেন। এ নিয়ে ব্যাংকগুলো বেশ বেকায়দায় রয়েছে। 

এর আগে গেল বছরও তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছিল দেশের অধিকাংশ ব্যাংক। সেই সুযোগে তারল্যের সংস্থান করতে অধিক সুদে অন্য ব্যাংকের আমানত বাগিয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলের ব্যাংক কর্মকর্তারা। তবে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে দৃশপট বদলে গেছে। ব্যাংকগুলোতে এখন রীতিমতো অলট অর্থের জোয়ার বইছে। দেশে করোনার ভ্যাকসিন আসার পর মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে। তাতে করে বিনিয়োগ বাড়বে। আর তখন অতিরিক্ত তারল্য বা অলট অর্থের পরিমাণও কমবে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *