এসভি ডেস্ক: সিলেট নগরে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান উদ্দিনের (৩০) দেহে ১১১ আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ফরেনসিক রিপোর্টে। এসব আঘাতের ৯৭টি লীলাফোল আঘাত ও ১৪টি ছিল জখমের চিহ্ন। আঘাতগুলো লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে।
শনিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রিপোর্টটি পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত শেষে ডা. শামসুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রায়হানের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে। এ কারণেই অতিরিক্ত আঘাতে তার মৃত্যু হয়।
ওইদির রায়হানের মরদেহ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে আখালিয়া নবাবী মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে ফের দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, রোববার (১১ অক্টোবর) সকালে রায়হানের মৃত্যু হয়। পুলিশের দাবি, নগরের কাস্টঘর এলাকায় ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হন। কিন্তু স্বজনদের দাবি, তাকে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, তার স্বামীকে কে বা কারা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে রেখে তার হাত-পায়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করে এবং হাতের নখ উপড়ে ফেলে। পুলিশ ফাঁড়িতে রাতব্যাপী নির্যাতনের ফলে আমার স্বামী মারা যান।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, তাদের আড়াই মাস বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। গত ১১ অক্টোবর ভোর ৪টা ৩৩ মিনিটের দিকে নিহতের মায়ের নম্বরে ফোন যায়। ফোন রিসিভ করেন রায়হানের সৎ বাবা হাবিবুল্লাহ। ফোন রিসিভ করতেই রায়হান বলেন, ‘আমাকে বাঁচাও, টাকা নিয়ে বন্দরফাঁড়িতে আসো’। হাবিবুল্লাহ ভোর ৫টা ৩০ মিনেটের দিকে টাকা ফাঁড়িতে পৌঁছান। তখন দায়িত্বরত এক কনস্টেবলের কাছে রায়হানের খবর জানতে চাইলে বলা হয় রায়হান ঘুমিয়ে এবং যারা তাকে ধরে এনেছে, তারাও চলে গেছে সকাল সাড়ে ৯টায় আসতে বলা হয়।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় ১০ হাজার টাকা নিয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যাবার কথা বলে ওই কনস্টেবল। পুলিশের কথামতো নিহতের সৎ বাবা হাবিবুল্লাহ টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে গিয়ে রায়হান কোথায় জানতে চাইলে বলা হয়, রায়হান অসুস্থ হওয়ায় তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার সৎ শ্বশুর হাসপাতালে গিয়ে রায়হানের মরদেহ দেখতে পান।
মামলা দায়েরের পর এসআই আকবরসহ ৪ পুলিশকে বরখাস্ত ও ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়। ঘটনার পর রোববার থেকে আকবর পলাতক রয়েছেন।
মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ পিবিআইতে স্থানান্তর হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। সর্বপরি মরদেহ কবর থেকে তুলে পুনঃময়না তদন্ত করে।
রায়হানের হত্যার ঘটনায় এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে জোরদার হচ্ছে আন্দোলন। প্রতিদিন সিলেট নগরের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ মানববন্ধন এবং রাস্তা অবরোধ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।