Spread the love

বাংলদেশের সর্বদক্ষিণে সুন্দরবনের কোল ঘেষে দাড়িয়ে থাকা সাতক্ষীরার, ছোট্র একটি গ্রাম ঘোনা। সময়টা ছিল দেশবিভাগের সময়। এই গ্রামের দরিদ্র ভ্যান চালক রহিল উদ্দিন। দরিদ্রের কষাঘাতে সে এতই পিষ্ট যে তার বুকের সবকটি হাড় বাইরে থেকে গোনা যায়। মেয়ে ফুলবানু, তার স্ত্রী রোমেসা কে নিয়ে অনাহারে অর্ধ-হারে খেয়ে না খেয়ে কোনো ভাবে কাটে তাদের দিন। সময়টা ছিল আষাড় মাস চারিদিকে প্রচন্ড বৃষ্টি, বাইরে যাওয়ার মত কোন পরিবেশ নেই। কিন্তু পেটের ক্ষুধা তো আর থেমে থাকবে না।সেই সাথে মেয়েটার শরীরটা ওভাল না তাই শত বাধা অতিক্রম করে,রহিল উদ্দিন কে ভ্যান নিয়ে বের হতে হলো।বাড়ি থেকে বেশ কিছুদুরে বাজার। আর বাজারে ছাড়া কোন ভাড়া পাওয়া যাবে না।তাই সে বাজারের দিকে রওনা দিল। বাজারে পৌছে অনেকক্ষণ বসে আছে কিন্তু কোনো ভাড়া হচ্ছে না। বৃষ্টিতে ভিজে দাড়িয়ে আছে তো দাড়িয়ে আছে। মেয়ে অসুস্থ তার জন্য ঔষধ কিনতে হবে। তাই সে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছে।সন্ধ্যা হয়ে গেল এখনো কোন ভাড়া বা টাকার ব্যবস্থা হলো না। ডাক্তারের কাছে বাকি চাইবে, ডাক্তারও অনেক টাকা পাবে।

হঠাৎ করে তার সামনে দুজন বুড়ো-বুড়ি এসে হাজির হলো। তাদের সমস্ত শরীর ভেজা, দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারাও খুবই ক্লান্ত। তারা ছিল হিন্দু ধর্মের লোক। তারা বল্ল বাবা আমাদেরকে নিয়ে সীমান্তের কাছে রেখে এসো। আমরা আজ রাতের মধ্যো ভারতে চলে যাবে।সীমান্ত অনেক দুর সারা রাস্তা কাঁদায় ভরা যেতে অনেক কষ্ট হবে।কিন্তু তার কি কষ্টের কথা ভাবলে হবে।কোনো কথা না বলে, তাদের কে ভ্যানে উঠিয়ে নিল। অার শরীরের সকল শক্তি দিয়ে কাঁদার মধ্যো ভ্যান ঠেলতে লাগল। ভ্যান ঠ্যালে আর মনে মনে ভাবে, টাকা দিয়ে সবার আগে মেয়ের জন্য ঔষধ কিনবে।তারপর চাল ডাল তরকারি কিনবে। বৃষ্টি ও কাঁদার মধ্যো অনেক কষ্ট করে রাত নয়টার সময়, তাদেরকে নিয়ে ভারত সীমান্তে পৌছালো। বুড়ো বুড়ি খুবই খুশি হলেন।তারা বাংলদেশ থেকে তাদের সবকিছু বিক্রি করে চিরদিনের জন্য ভারতে চলে যাচ্ছে।রহিল উদ্দিনকে এখন টাকা দেওয়ার পালা।কিন্তুু তাদের কাছে তো কোন টাকা নেই।অনেক খুজে সাত টাকা পেলো।সাত টাকা দেখে রহিল উদ্দিন খুবই রেগে গেলেন।কিন্তুু কি করবে।তারা যে বৃদ্ধ মানুষ।সেও তো একদিন বৃদ্ধ হবে।বেশি টাকা দিতে না পেরে বৃদ্ধ লোকটি রহিল উদ্দিন কে একটি পিতল কাসার বাটি দিল আর বলল বাবা রাগকরিসনা, এই বাটিটা বাজারে বিক্রি করে যে টাকা পাবি তা তোর ভ্যান ভাড়ার টাকা হয়ে যাবে।সৃষ্টি কর্তা তোর ভাল করবে বাবা।তারতো এখন টাকা খুবই দরকার,তার পরেও কি আর করবে। ব্যাচারা ওই সাত টাকা দিয়ে মেয়ের জন্য ঔষধ কিনে বাসায় চলে আসল, কোন দোকান খোলা ছিলনা তাই বাটিটা বিক্রয় করতে পারলো না।ভাবলো পরে বিক্রয় করবে।বাটিটা তার বৌকে দিয়ে বলল ভাল করে পরিষ্কার করে রাখতে কাল সকালে বিক্রি করবে।

রহিল উদ্দিনের বৌউ কাসার বাটিটা পরিষ্কার করার পরে দেখলো বাটিটা স্বর্ণের মত চক চক করছে,এবং এটি ওজনে অনেক ভারি। সে বিষয়টি রহিল উদ্দিনকে জানালো, তখন তারা চিন্তা করতে লাগল বাটিটি স্বর্ণের কিনা। পরে বাটিটি নিয়ে সে স্বর্ন কারের কাছে গেল।বাটিটি দেখে স্বর্ণ কারের চোঁখ তো ছানা বড়া।বাটিটা পুরাটাই স্বর্ণের। এবং এটি কেনার মত টাকা ওই স্বর্ণকারের নেই।পরে ওই স্বর্ণের বাটিটি রহিল উদ্দিন ও ওই স্বর্ণকার মিলে শহরে নিয়ে এক লক্ষ্য টাকা বিক্রি করল।

এই স্বর্ণের বাটি দিয়ে তার ভাগ্যে খুলে গেলো। ওই টাকা দিয়ে সে কিছু জমি কিনল।আর একটি অটো রিকশা কিনে চালাতে লাগলো। এখন আর তাদের কোন অভাব রইলো না।সুখে শান্তিতে কাটতে লাগল তাদের দিন। আর এই সবকিছু সম্ভম হয়েছে ভ্যান ভাড়ার বিনিময়ে পাোয়া ওই স্বর্ণের বাটির কারনে।

লেখক: মোঃ আব্দুর রহমান (রাসেল)
বি.এ অনার্স, এম.এ, ঢাঃবিঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *