এসভি ডেস্ক: সবর বা ধৈর্যধারণকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন। তিনি তাদের পুরস্কৃত করার জন্যও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য কামনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন (সূরা আল বাকারা : ১৫৩)
আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সবরকারীদের বেহিসাব প্রতিদান পূর্ণরূপে প্রদান করা হবে।’ (সূরা জুমার : ১০)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করতে চায় আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীল করে দেন। ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও সুপ্রশস্ত অন্য কোনো দান আল্লাহ কাউকে প্রদান করেননি।’ (বুখারি ও মুসলিম) ওমর (রা.) বলেন, আমি যখনই কোনো বিপদে পতিত হয়েছি, বিনিময়ে আল্লাহ তাতে আমাকে চার প্রকার নিয়ামত প্রদান করেছেন। বিপদটি আমার ধর্মীয় বিষয়ে হয়নি, বিপদটি সর্ববৃহৎ হয়নি, তাতে আমি সন্তুষ্টি থেকে বঞ্চিত হইনি এবং তাতে আমি প্রতিদানের আশা রাখি।
ধৈর্যের স্তর : ১. নিম্নস্তর : বিপদাপদকে অপছন্দ করা সত্ত্বেও কোনো অভিযোগ না করা। ২. মধ্যবর্তী স্তর : সন্তুষ্টির সঙ্গে অভিযোগ পরিত্যাগ করা। ৩. উচ্চস্তর : বিপদাপদেও আল্লাহর প্রশংসা করা। কেউ যদি নিপীড়িত হয়ে নিপীড়নকারীর ওপর বদ দোয়া করে, সে তো নিজেকে সাহায্য করল, নিজের হক আদায় করে নিল, সবরকারী হতে পারল না।
ধৈর্য দুই প্রকার : ১. শারীরিক বিপদাপদে ধৈর্য। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। ২. আত্মিক বিষয়ে ধৈর্য। অর্থাৎ স্বাভাবিক আকর্ষণীয় বিষয়ে এবং প্রবৃত্তিসংক্রান্ত বিষয়ে ধৈর্য ধারণ।
দুনিয়ায় মানুষ যা লাভ করে তা দুটির যে কোনো একটি : ১. মনে যা চায় তাই লাভ করে। তখন আবশ্যক হচ্ছে শুকরিয়ার মাধ্যমে আল্লাহর হক আদায় করা এবং কোনো কিছুই আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যয় না করা। ২. মন যা চায় তার বিপরীত বিষয়। এটা তিন ভাগে বিভক্ত— ক. আল্লাহর আনুগত্য করার ক্ষেত্রে সবর করা। এ ক্ষেত্রে ওয়াজিব সবর হচ্ছে ফরজ কাজগুলো বাস্তবায়ন করা এবং নফল সবর হচ্ছে সুন্নাত, মুস্তাহাব ও নফল কাজগুলো আদায় করা। খ. আল্লাহর অবাধ্য না হওয়ার ক্ষেত্রে সবর করা। এ ক্ষেত্রে ওয়াজিব হচ্ছে হারাম বিষয়গুলো পরিত্যাগ করা এবং মুস্তাহাব হচ্ছে মাকরুহ তথা নিন্দনীয় বিষয়গুলো পরিত্যাগ করা। গ. আল্লাহর নির্ধারণকৃত বিপদাপদে সবর করা। এ ক্ষেত্রে ওয়াজিব হচ্ছে অভিযোগ করা থেকে জবানকে সংযত রাখা। আল্লাহর নির্ধারণে রাগান্বিত হওয়া বা প্রশ্ন তোলা থেকে অন্তরকে বিরত রাখা এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টকারী কাজ থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সংযত রাখা। যেমন গালাগালি-রাগারাগি না করা এবং বিলাপ করে ক্রন্দন, কাপড় বা চুল ছেঁড়া, নিজের শরীরে আঘাত করা প্রভৃতি কাজ থেকে বিরত থাকা। আর মুস্তাহাব হচ্ছে আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন তাতে অন্তরে সন্তুষ্টি পোষণ করা।