দেবহাটা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার দেবহাটায় সীমা রায় (২৬) নামের এক অসহায় স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলার কাছ থেকে সেনাবাহিনীর দেয়া সিমেন্ট শীট (এলভেষ্টর) জোর পূর্বক নিয়ে নিয়েছে বিএনপি নেতা রেজাউল করিম বাপ্পা।
ভুক্তভোগী সীমা রায় দেবহাটা সদরের বসন্তপুর বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সুমঙ্গল রায়ের স্বামী পরিত্যক্তা স্ত্রী। সম্প্রতি ঘূর্নিঝড় আম্পানে মাটির তৈরী একমাত্র কুঁড়ে ঘরটি বিধ্বস্ত হওয়ায় নতুন করে ঘর নির্মানের জন্য সোমবার ওই স্বামী পরিত্যাক্তা নারী সীমা রায়কে ৭২টি সিমেন্ট শীট (এলভেষ্টর) দিয়েছিলো যশোর সেনানিবাসের ৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যরা। কিন্তু সিমেন্ট শীট বিতরণ শেষে সেনা সদস্যরা চলে যাওয়ার পরপরই জোর পূর্বক বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা সীমা রায়ের কাছ থেকে ১২ টি সিমেন্ট শীট (এলভেষ্টর) নিয়ে নেয় বিএনপি নেতা রেজাউল করিম বাপ্পা। ফলে সেনাবাহিনীর দেয়া সিমেন্ট শীট বিএনপি নেতা নিয়ে যাওয়ায় আম্পানে ভেঙে যাওয়া মাটির কুঁড়ে ঘরটি পুনঃনির্মান করতে পারছেনা ভুক্তভোগী পরিবারটি। অদ্যবধি শিশু সন্তানকে নিয়ে পলিথিনে মোড়ানো ভাঙা কুঁড়ে ঘরটিতে দিন কাটাচ্ছেন স্বামী পরিত্যাক্তা সীমা রায়। ভুক্তভোগী সীমা রায় জানান, কয়েক বছর আগে একমাত্র শিশু সন্তানসহ তাকে ফেলে ভারতে চলে যায় স্বামী সুমঙ্গল রায়। এরপর থেকে দেবহাটা সদরের বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন ইছামতি নদীর পাশে সরকারি জমিতে একটি জরাজীর্ণ মাটির কুঁড়ে ঘরে বসবাস করছেন তিনি। স্বামী পরিত্যাক্তা হওয়ায় মাঠে ঘাটে নারী শ্রমিক হিসেবে দিনমজুরিসহ মানুষের বাড়ীতে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে কোনভাবে সংসার চলে তার। সম্প্রতি সুপার সাইক্লোন আম্পানে তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল ওই মাটির কুঁড়ে ঘরটিও ভেঙে যায়। ফলে ভাঙা ঘরটিতে পলিথিন মুড়ে দুর্ভোগ দূর্দশায় দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি।
সোমবার যশোর সেনানিবাসের ৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যরা সীমা রায়কে ঘর নির্মানের জন্য ৭২টি সিমেন্ট শীট (এলভেষ্টর) দেন। পরবর্তীতে সেনা সদস্যরা চলে গেলে সীমা রায়কে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর পূর্বক ১২ টি সিমেন্ট শীট নিয়ে নেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেবহাটা পোস্ট অফিস সংলগ্ন এলাকার মৃত আবুল কালামের ছেলে রেজাউল করিম বাপ্পা। ভুক্তভোগী সীমা রায়ের প্রতিবেশীসহ দেবহাটা উপজেলা মোড়ের স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দারা জানান, বিএনপি নেতা রেজাউল করিম বাপ্পা অসহায় ওই স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলা সীমা রায়ের কাছ থেকে জোরপূর্বক ১২টি সিমেন্ট শীট নিয়ে দেবহাটা এলজিইডি অফিসের নারীকর্মী ফিরোজা বেগমের বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছে। তবে কি কারনে স্বামী পরিত্যাক্তা সীমা রায়ের থেকে সেনাবাহিনীর দেয়া সিমেন্ট শীট নিয়ে বিএনপি নেতা রেজাউল করিম বাপ্পা এলজিইডি অফিসের নারীকর্মী ফিরোজা বেগমের বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি লজ্জাজনক হওয়ায় স্থানীয়রা মুখ খুলতে রাজি হননি। এদিকে বিষয়টি নিশ্চিত হতে মঙ্গলবার দুপুরে দেবহাটা কলেজ সম্মুখে এলজিইডি’র ওই নারীকর্মী ফিরোজা বেগমের বাড়ীতে গেলে তার ভাই রবিউল ইসলাম জানান, প্রথমে সেনাবাহিনী ২০ টি এবং পরে রেজাউল করিম বাপ্পা তাদের বাড়ীতে আরো ১২টি সিমেন্ট শীট পাঠিয়ে দিয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আরমান হোসেন জানান, সেনাবাহিনীর দেয়া সিমেন্ট শীট জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ভুক্তভোগী সীমা রায়ের মাধ্যমে শুনেছি। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সেনাসদস্যরা মানুষের কল্যাণে কাজ করলেও, এধরনের কিছু মানুষের কর্মকান্ডে সেগুলো ম্লান হতে চলেছে। এঘটনায় জড়িতের শাস্তি দাবী করেন তিনি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে যশোর সেনানিবাসের ৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের সিনিয়র অপারেশন অফিসার আতিকুর রহমান আতিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাদের সেনা সদস্যরা সিমেন্ট শীট বিতরণ শেষে চলে যাওয়ার পর স্থানীয় কেউ এধরণের ঘটনা ঘটালে তার জন্য সেনাবাহিনী দায়ী নয়। এব্যপারে খোজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান। এদিকে বিষয়টি নিয়ে সর্বশেষ অভিযুক্ত বিএনপি নেতা রেজাউল করিম বাপ্পার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।