কামরুল হাসান: কলারোয়া উপজেলার হেলাতলার জাফরপুর গ্রামের মসজিদের দুই জমিদাতার ৫ ছেলের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও খবরদারিতে মুসল্লিরা ও এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একইসাথে মসজিদের অর্থ তছরুপের প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসীর সাথে খারাপ ব্যবহার থেকে শুরু করে মামলা করার হুমকি দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বুধবার বিক্ষোভ দেখিয়ে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় বহু নারী-পুরুষ।
শুক্রবার কলারোয়ায় সাংবাদিকদের কাছে লিখিত অভিযোগে এমন দাবি করেছেন ওই গ্রামের অনেকে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কলারোয়া উপজেলার ৯নং হেলাতলা ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত গোলাম হোসেন এবং মৃত কিতাব আলী মসজিদের জন্য সাড়ে পাঁচ শতক জায়গা দান করেছিলেন। কিতাব আলী তিন শতক ওই সময়ে লিখে দেন। আর গোলাম হোসেন মৌখিকভাবে দান করেন আড়াই শতক। যদিও পরবর্তীতে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তার ছেলেরা আড়াই শতক মসজিদের নামে লিখে দিয়েছিলেন। দুই জমিদাতার বর্তমানে পাঁচ ছেলে। তারা হলেন- আব্দুর রশিদ, আব্দুর রহিম, আব্দুল করিম, শহীদুল ও রফিক।
স্থানীয় গ্রামবাসী ও মুসল্লিরা মসজিদটা তিল তিল করে বর্তমানে বিল্ডিংয়ে রূপান্তরিত করেন। মসজিদটি পরিচালনার জন্য কমিটি করা হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলো দুইজন জমিদাতার ছেলেরা মসজিদ কমিটির তোয়াক্কা না করে বরাবরই নিজেদের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেন। যাবতীয় সিদ্ধান্ত তারা নিজেরাই নিয়ে থাকেন। তাদের এই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ম্যানেজিং কমিটি, গ্রামবাসী ও মুসল্লীরা না মানায় বহুদিন ধরে একটা বিরোধ তৈরি হয়।
জমিদাতার ছেলে হিসাবে মুসুল্লিরাও তাদের প্রাধান্য দিয়ে আসছিলেন। তাদের চাওয়ায় অনুপাতিক ম্যানেজিং কমিটি পুনঃগঠনের সিদ্ধান্ত হয় এবং তাদের মতামত অনুযায়ী ইমাম সাহেবকে কমিটি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তী জুম্মা বাদ সকলের উপস্থিতিতে ইমাম সাহেব কমিটি ঘোষণা করেন। কিন্তু সেই কমিটি জমিদাতার ছেলেরা মেনে নিতে চাননি। বিরোধিতা সত্ত্বেও সকল মুসল্লিদের ইচ্ছানুযায়ী সেই কমিটি বহাল থাকে কিন্তু মসজিদের উপরে জমিদাতার ছেলেদের হস্তক্ষেপ কমেনি। বিশেষ করে দান বক্স থেকে দানকৃত অর্থ ও মসজিদের অনুদান নিজের কাছে জামানত রেখে সঠিক হিসাব না দেয়া ছিলো অন্যতম।
অভিযোগে আরো বলা হয়- মসজিদে সরকারের অনুদান হিসেবে সোলার দেয়া হয় কিন্তু সেই সোলার মসজিদে না লাগিয়ে নিজেদের বাড়িতে ব্যবহার করেন জমিদাতার ছেলেরা।
এব্যাপারে মসজিদের মুসল্লীরা প্রতিবাদ জানালে তাদের মামলা-হামলার হুমকি দিয়ে দমন করে রাখেন। এমনকি ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ মসজিদের আংশিক অংশ সংস্কারসহ মসজিদের নানান বিষয়ে জমিদাতার ছেলেদের সাথে বর্তমান গ্রামের অনেকের মতপার্থক্য ও সম্পর্কের ঘাটতি বিদ্যমান।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়- গত ২৫মে ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে এলাকার বাচ্চা ছেলেরা আতশবাজি ফোটায়। সেসময় জমিদাতার পৌত্র শরিফুল ইসলাম লাঠি নিয়ে ওই সকল বাচ্চা ছেলেদের তাড়াতাড়ি করেন। এই ঘটনার জেরে বাচ্চাদের অভিভাবকদের সাথে শরিফুল ইসলামের কথা কাটাকাটি হয়। তখন গ্রামের মুরুব্বিগণ তাদের ভিতর সমঝোতা করে দেন। তবে তারা সেটা না মেনে নিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষের মামলার হুমকিও দেন।
এদিকে, ওই ঘটনায় গ্রামবাসী আতঙ্কের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছেন। বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের মাধ্যমে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতিকার চেয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন গ্রামবাসী।