Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি: করোনাভাইরাসের প্রভাবে অঘোষিত লকডাউন হওয়ার পর কর্মহীন সাতক্ষীরা জেলার স্বর্ণের দোকানে কর্মরত শ্রমিকরা। ফলে স্ত্রী-সন্তান-পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্বর্ণ শ্রমিক বলেন, ঘরে চাল নাই, কোনো টাকা নেই, খেতে পারি না, স্ত্রী-পরিজনদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারিনা, বাসা ভাড়া দিতে পারি না, আবার মানুষের কাছে চাইতেও পারি না। করোনা মোকাবিলায় ঘর থেকে বাইরে যেতে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে সরকার। সে মোতাবেক আমাদের ঘর থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কিন্তু অনাহারে-অর্ধাহারে আমরা দিনপাত করলেও জেলার সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা আমাদের কোনো খোঁজ খবর নেইনি।

শহরের পলাশপোল গ্রামের স্বর্ণ শ্রমিক ধ্রুব বিশ্বাস জানান, জুয়েলারির দোকানের কাজ বন্ধ। সরকার এখন বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। প্রায় ৪০ দিন হয়ে গেল কোনো সরকারি খাবারও তো পাইনি। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ আমি। ঘরে কিছু নেই। এখন আমরা খাব কী? স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। এভাবে আর পারছি না। বিষয়টি মানবিক ভাবে বিবেচনায় নিয়ে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের আমাদের পাশে এসে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান তিনি।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বর্ণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গৌরাঙ্গ সরকার বলেন, জেলার অধিকাংশ স্বর্ণ শ্রমিক দিন আনে দিন খায়। একদিন মজুর না দিলে তাদের চুলায় হাড়ি জ্বলে না। এরপরেও অধিকাংশ শ্রমিকের কোনো টাকা পয়সা মজুদ নেই। বৈশ্বিক করোনার এই সময়ে অঘোষিত লকডাউন হওয়ার জেলার জুয়েলারিগুলোও বন্ধ। ফলে কর্মহীন হয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব স্বর্ণ শ্রমিকরা। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি কর্মহীন ও অসহায় মানুষের পাশে খাদ্য সহায়তা নিয়ে হাজির হলেও কেউ খোঁজ করেননি কোনো স্বর্ণ শ্রমিকদের।

তিনি আরও জানান, শ্রমিকদের অসহায়ত্বের বেদনা সইতে না পেরে তাদের খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য অনেক জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তাদের অনুরোধ করলেও তারা এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এই দুঃসময়ে স্বর্ণ শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বর্ণ শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মিলন রায় জানান, আমাদের সংগঠনের রয়েছে ৫’শ এর অধিক শ্রমিক। এর বাইরেও কিছু শ্রমিক রয়েছে। সরকার প্রধান ঘোষিত খাদ্য সামগ্রী কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও এসব স্বর্ণ শ্রমিকরা কোনো খাদ্য ও সরকারি প্রনোদনা পাইনি।

তিনি আরও জানান, ১০ মে সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে বেশ কিছু দোকানপাট ও শপিং মল খুললেও জুয়েলারিগুলো না খোলায় সাতক্ষীরার স্বর্ণ শ্রমিকরা এর বাইরে। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া সাধারণ স্বর্ণ শ্রমিকরা। এমতাবস্থায় সরকার প্রধান ঘোষিত প্রনোদনা ও খাদ্য সহায়তা পাওয়ার জোর দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে কামনা করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *