মুনসুর রহমান: অঘোষিত লকডাউনের প্রভাবে বকেয়া ভাড়ার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে দোকান কর্মচারীর বেতন সাতক্ষীরার শহরের প্রায় ১৫ হাজার ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এ অবস্থায় ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরা দোকান ভাড়া মওকুফ চেয়েছেন।
জানা গেছে, শহরে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার দোকান রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার দোকানই ভাড়াটিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। শহরে সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দোকান ভাড়া রয়েছে। প্রতিটি দোকানে সর্বনিম্ন দুজন থেকে সর্বোচ্চ ১০ জন পর্যন্ত কর্মচারী রয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বন্ধ থাকা এসব দোকানের শ্রমিকদের বেতনও দিতে পারছে না ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরা।
শহরের বিভিন্ন ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে চলছে অঘোষিত লকডাউন। ফলে অধিকাংশ নিম্ন-মধ্যবিত্ত সহ অনেকের ঘরের খাবার শেষ হয়ে গেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দোকানপাট ছাড়া হাট-বাজারও বন্ধ। এর মধ্যেও ত্রাণের আশায় ঘরের দরজার সামনে ভাড়াটিয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দাঁড়িয়ে থাকেন কেউ কেউ। কে কখন ত্রাণ নিয়ে আসেন সেই প্রতীক্ষায়। রয়েছেন চরম বিপাকে। আবার কেউবা লোক লজ্জায় না খেয়েই দিন পার করেন। আবার এই মুহূর্তে দোকান মালিকরা ভাড়ার টাকার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র উর্দ্ধতন সহ-সভাপতি এনছান বাহার বুলবুল সাতক্ষীরা ভিশনকে জানান, এখন করোনা ভাইরাসের কারণে সাতক্ষীরার যেসব শ্রমিক, দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করে চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র পক্ষে ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন। এরপরও যারা এখনও কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি তাদের বাড়িতে গোপনে খাদ্য সহায়তা পৌছাতে দিতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে।
প্রাণসায়ের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন লস্কর শেলী সাতক্ষীরা ভিশনকে জানান, আমাদের সংগঠনের প্রায় ৪’শ জন সদস্য। এছাড়াও শহরের অধিকাংশ দোকান ভাড়ায় পরিচালিত হয়। করোনা দুর্যোগে দোকান বন্ধ থাকায় এমনিতে ব্যবসায়ীরা রয়েছে বেকায়দায়। তার ওপর দোকান ভাড়া পরিশোধের চাপ দিচ্ছে মালিকরা এমন অভিযোগ এখনও কেউ করেনি। তবে ভাড়ার টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে দোকান মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা মোবাইল রিচার্জ মালিক সমিতির সভাপতি কাজী আক্তার হোসেন সাতক্ষীরা ভিশনকে জানান, শহরে ৪-৫’শ থাকলেও জেলাব্যাপী প্রায় ২ হাজারের অধিক মোবাইল রিচার্জের দোকান রয়েছে। এদের প্রায় সবগুলোই ভাড়ায় পরিচালিত হয়। তবে ঘোষিত লকডাউনের প্রভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকান ভাড়ার চাপে ভুলে গেছেন করোনাভাইরাসের কথা। বাধ্য হয়ে অনেকেই স্বল্প পরিসরে দোকানপাট খুলছে ভাড়ার টাকা ও শ্রমিকদের বেতন যোগানোর আশায়। তবুও; দেখা মিলছে না কোনো আশার আলো।
নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি অ্যাড. ফাইমুল হক কিসলু সাতক্ষীরা ভিশনকে জানান, প্রায় এক মাস ছুটি থাকায় ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের এখন কোনো কাজ নেই, ব্যবসা নেই, ঘরে খাবার নেই; তবুও এদের ওপর প্রায় লক্ষাধিক পরিবারের সদস্য নির্ভরশীল। এখন তাদের পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের কাছ থেকে দোকান ভাড়ার টাকা জোরপূর্বক আদায় করা হবে অমানবিক।
পৌর লাইন্সেস শাখা কর্মকর্তা জুলহাজ সাতক্ষীরা ভিশনকে জানান, পৌরসভার অভ্যন্তরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সহ প্রায় ১১ হাজার দোকান রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার রয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী । তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, শহরে শুধু পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান রয়েছে প্রায় ১১ হাজার। এর মধ্যেও প্রায় অর্ধেক এর বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাদের দোকানগুলোও অধিকাংশ ভাড়ায় পরিচালিত হয়। করোনা দুর্যোগে দোকান বন্ধ থাকায় এমনিতে ব্যবসায়ীরা রয়েছে বেকায়দায়। তার ওপর দোকান ভাড়া পরিশোধের চাপ। ব্যবসায়ীদের দোকান ভাড়া মওকুফের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
চায়ের দোকানদার পলাশপোলের হযরত আলী সাতক্ষীরা ভিশনকে জানান, মোখলেছ নায়ের দোকান ভাড়া নিয়ে চায়ের ব্যবসা দীর্ঘদিন পরিচালনা করছি। প্রত্যেক মাসে ৫ তারিখের মধ্যে ভাড়ার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও গত ২ মাস দিতে পারিনি। দোকান বন্ধ, ঘরে খাবার নেই; তাতে দোকান ভাড়া প্রতিমাসে ২৫০০ টাকা। কিভাবে দেবো বুঝতে পারছি না। ভাড়ার টাকার জন্য মালিকের লোক বারবার তাগিদ দিচ্ছে। তাই, অন্তত ২ মাসের ভাড়ার টাকা মওকুফ করে দেওয়া জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।