Spread the love

মোমিনুর রহমান: করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটময় সময়ে খাদ্য সামগ্রী হিসেবে দেয়া সরকারের ত্রাণের চাউল বিতরণে অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুশিয়ার করেছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল।

বুধবার বিকাল ৪টায় দেবহাটা উপজেলা পরিষদ হলরুমে করোনা প্রতিরোধে ত্রাণ, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক দুরত্ব বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের এখনও সংকটময় বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া কেবলমাত্র সরকারের পক্ষে মহামারী করোনার মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। সরকার প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে যতটুকু বরাদ্দ দিয়েছে তা সুষ্ঠভাবে অসহায়, দারিদ্র ও কর্মহীন পরিবারের মাঝে বিতরণ করতে হবে।

এছাড়া বেসরকারী সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে যেসকল খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট মাস্টাররোল প্রশাসনের কাছে জমা দিতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে বসবাসরত প্রত্যেকটি মানুষকে ত্রাণ দেয়া সম্ভব নয়। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী যেসকল শ্রেণির মানুষ সহায়তা পাওয়ার যোগ্য, কেবলমাত্র তাদেরকেই ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে। প্রত্যেক ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে সরকারি নানা সুবিধা প্রাপ্ত ভাতাভোগীদের নাম ত্রান সহায়তার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য একজন করে হাইস্কুলের শিক্ষক, একজন করে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ও একজন করে ইমামদের নাম কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে।

ত্রাণ তহবিলে সহায়তা প্রদান ও এসংক্রান্ত তথ্য উপজেলা প্রশাসনের ফেইসবুকে প্রতিদিন উপস্থাপন করতে হবে। ত্রাণ বিতরণ কর্মকান্ড প্রতিদিন উপজেলা প্রশাসনের সফটওয়্যারে আপলোড করতে হবে এবং ত্রান তহবিল ও বিতরণ সংক্রান্ত তথ্য প্রেসনোট হিসেবে প্রতিদিন প্রেসক্লাবের নির্দিষ্ট ই-মেইলে প্রেরণ করতে হবে। ত্রানের চাল বিতরনে অনিয়ম কিংবা কোনপ্রকার হেরফের করলে তাদেরকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। এমনকি মোবাইল কোর্টে তাদেরকে জেল জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি সকলকে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, যারা সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় ফিরেছেন তাদের অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে সার্বক্ষনিক কোয়ারেন্টাইন মনিটরিং করে কোয়ারেন্টাইনে থাকা পরিবারকে সাধ্যমত সহায়তা প্রদানের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। করোনা ভাইরাসের কারণে আগামীতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশ মারাত্বকভাবে অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কৃষি খাতকে আরো অগ্রসর করে তুলতে হবে। দেবহাটা তথা সাতক্ষীরার এক ইঞ্চি মাটিও যেন পরিত্যাক্ত পড়ে না থাকে সেবিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রত্যেকের যতটুকু জমি আছে সেখানে চাষাবাদ করতে হবে। কোন জমি ফেলে রাখা যাবেনা।

এছাড়া সামনে বোরো মৌসুম আসছে, বোরো মৌসুমের ফসল সুষ্ঠভাবে উদপাদন ও বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করতে হবে। সাতক্ষীরাতে চিংড়ী চাষ ও সর্বোচ্চ মাত্রায় উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। এক কথায় যেকোন ভাবেই হোক জেলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে সচল করতে হবে। ত্রাণ বিতরণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ছড়ানোর বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেও একটি চক্র অপপ্রচার ছড়ানো ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এদের থেকে সজাগ থাকতে হবে। এমনকি এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দেবহাটা থানার ওসিকে নির্দেশনা দেন তিনি। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং সংক্রমন প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সকলকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্যও সকলের প্রতি আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল।

মতবিনিময় সভায় দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীণ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জিএম স্পর্শ, সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতন, সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী, পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসাদুল ইসলাম, দেবহাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শাওন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল লতিফ, কৃষি অফিসার শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার শফিউল বশার, প্রোগ্রাম অফিসার ইমরান হোসেনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভায় দেবহাটা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা তাদের প্রত্যেকের ছয় মাসের সম্মানী ভাতা উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণ তহবিলে জমা দেয়ার ঘোষণা দেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *