Spread the love

মোমিনুর রহমান: বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষও যখন করোনা আতঙ্কে রয়েছে, ঠিক সংকটকালীন সেই মুহুর্তে মহামারী করোনা ভাইরাসকে ইস্যু বানিয়ে দেবহাটাতে চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে কিছু মুনাফা লোভী অসাধূ ব্যবসায়ী।

মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে দেবহাটার সখিপুরসহ পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেক বাজারে প্রকারভেদে বস্তাপ্রতি চালের দাম বাড়ানো হয়েছে এক’শ থেকে তিন’শ টাকা পর্যন্ত। আর কেজি প্রতি চালের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত।

এতে করে একদিকে করোনা আতঙ্ক, অন্যদিকে চালের লাগামহীন দাম বৃদ্ধিতে তীব্র বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন উপজেলার সকল শ্রেনী পেশার মানুষ।
প্রতিনিয়ত চালের উৎপাদন ও সরবরাহ থাকলেও, শত শত বস্তা চাল গোডাউনে মজুদ করে দেবহাটা উপজেলার সম্পূর্ণ চালের বাজার নিয়ন্ত্রনকারী সিন্ডিকেটের কয়েকজন চাল ব্যবসায়ী, আড়ৎদার ও মিল মালিকরা যোগসাজোসে চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাসহ সাধারণ মানুষের।

চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলা অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন সখিপুর বাজারের চালের আড়ৎ মালিক খেজুর বাড়িয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম, একই গ্রামের বাবুর আলী, টাউনশ্রীপুরের অজেদ আলী। দেবহাটা উপজেলার সিংহভাগ চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন এই তিন মুনাফা লোভী ব্যবসায়ী।

সখিপুর চালের বাজার আড়ৎ ছাড়াও খেজুরবাড়িয়া, চাঁদপুর, টাউনশ্রীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের চালেও গোডাউন ও মিল। প্রতিনিয়ত চালের উৎপাদন ও সরবরাহ থাকা স্বত্তেও এসকল অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের গোডাউনে শত শত বস্তা চাল মজুদ করে রেখে করোনা ভাইরাসকে ইস্যু বানিয়ে তিন দিনের ব্যবধানে চালের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

করোনা ভাইরাসের কারনে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে চাল দেবহাটাতে আসছেনা প্রচার করে এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা চালের প্রতি কেজিতে ৩ টাকা থেকে ৭ টাকা হারে দাম বাড়িয়েছেন। আর এদের থেকে চাল কিনে খুচরা দোকান গুলোতে ৩ টাকা থেকে ১৪ টাকা পর্যন্ত বেশী দামে প্রতি কেজি চাল বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এতে করে চালের মুল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি বাজার স্থিতিশীল করতে অবিলম্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

বুধবার সখিপুরসহ বেশ কয়েকটি চালের বাজার পরিদর্শন ও প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বিগত তিনদিন আগে এলসি বা অটো ডায়াল মিলের চালের ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি দাম ছিলো ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা। যা মাত্র তিন দিনে বস্তা প্রতি বেড়ে বর্তমানে দাড়িয়েছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। আঠাশ চালের দাম ছিলো বস্তাপ্রতি ১৮০০ টাকা, যা বর্তমানে দাড়িয়েছে ১৯৫০ থেকে ২০০০ টাকায়। একই চাল খুচরা দোকান গুলোতে বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২১০০ টাকা পর্যন্ত। আতপ চাল পাইকারীভাবে প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা বেড়ে বস্তাপ্রতি দাড়িয়েছে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকায়। এছাড়া মিনিকেট ও বাসমতি চালেও দামও বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা হারে। এছাড়া খুচরা চালের দোকান গুলোতে লাগামহীন দামে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল।

খুচরা দোকান গুলোতে হাইব্রিড আঠাশ চাল তিন দিনের ব্যবধানে ১৩ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকার পরিবর্তে ৪১ টাকায়, দেশি আঠাশ চালের দাম কেজি প্রতি ১৪ টাকা বৃদ্ধিতে বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকার পরিবর্তে ৪২ টাকায়, উনপঞ্চাশ জাতের চাল কেজিপ্রতি ৪ টাকা বৃদ্ধিতে ৩৩ টাকার পরিবর্তে বিক্রি হচ্ছে ৩৭ টাকায় এবং ডায়াল মিলের মোটা চাল কেজিপ্রতি ৬ টাকা বৃদ্ধিতে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকার পরিবর্তে ৩৬ টাকা কেজিতে। নিত্যপ্রয়োজনীয় চালের এমন অস্থিতিশীল দামে নাকাল উপজেলার সর্বসাধারণ। সকলের দাবী মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে চালের দাম নিয়ন্ত্রণসহ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের।

দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ রয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে চাল সরবরাহ কোনভাবেই বাঁধাগ্রস্থ হয়নি। যারা করোনা ভাইরাসকে ইস্যু বানিয়ে চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ কঠোর শাস্তিমুলোক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *