Spread the love

মুনসুর রহমান: ১৯৭১ সালে সাতক্ষীরা পাওয়ার হাউজ অপারেশনে ১৩ জন বাংলার সাহসী দামাল ছেলেরা অনবদ্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। সময়ের পট পরিবর্তনের সাথে সাথে সাতক্ষীরায় বসবাসরত মানুষগুলো তাদের ভুলতে বসেছে। অন্যদিকে, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একেকজন একেক রকম বক্তব্য দিয়ে সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন করে আসছেন। এতে সাতক্ষীরা পাওয়ারহাউজ অপারেশনের যারা সেদিন অবদান রেখেছিলেন তারা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা জানান, রাজাকারদের সহযোগিতায় ১৯৭১ সালে সাতক্ষীরায় পাক বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছিল। তা প্রতিহত করতে সাতক্ষীরা পাওয়ার হাউজ গুড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা করলেন আমাদের ইটিনডি ক্যাম্পের কাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ। কিন্তু কাদের দিয়ে এ কাজ করা যায়। দীর্ঘসময় চিন্তার পরে তিনি ৮ নং সেক্টরের সহ-কমান্ডার শেখ আব্দুল মালেক ওরফে সোনা মিয়ার কথা ভাবলেন এবং ক্যাম্পে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠি মোতাবেক সোনা মিয়া ক্যাম্পের সার্জেন্ট গৌর চন্দ্র মন্ডলকে ইটিনডি ক ক্যাম্পের কাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ এর কাছে পাঠান। তখন তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন কিভাবে সাতক্ষীরা পার পাওয়ার হাউজ অপারেশন করতে হবে এবং অপারেশন এর জন্য বোমা সংগ্রহের কথাও জানান তিনি। কাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ আরও বলেছিলেন, অপারেশন সাকসেস্ করতে পারলে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা সাতক্ষীরা ত্যাগ করতে বাধ্য হবে। তোমরা প্রস্তুত নাও। সে নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ক্যাম্পে রশিদ নামের একটা ছেলে সাথে দেখা করি। রশিদ আমাদের ২ টা টাইম বোমের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। টাইম বোমটি সমস্তপথ বহন করে নিয়ে ঘোনার কামাববাড়ি ক্যাম্পে পৌঁছেছিলেন আব্দুল্লাহ, নজমুস শাহাদাৎ, সোনা মিয়া। ক্যাম্পে এসে সহকারি কমান্ডার সোনা মিয়া, গেরিলা কমান্ডার নজমুস শাহাদাৎ ও সহকারি কমান্ডার আব্দুল্লাহ, সার্জেন্ট গৌর চন্দ্র মন্ডল, সদস্য আশরাফ হোসেন ওরফে আশু, আব্দুর রফিক ওরফে রফিক, আব্দুল মান্নান ওরফে মান্নান, কাছেদ আলী ওরফে কাছেদ, আনিছুর রহমান খান বাবুল, কামরুজ্জামান বাবু, নজরুল ইসলাম ওরফে নজরুল, ওসমান এর সাথে পরামর্শ করলেন তারা। তারপর পরামর্শ মোতাবেক আমরা সাতক্ষীরা পাওয়ারহাউজ অপারেশন এর উদ্দেশ্যে ঘোনার কামাববাড়ি ক্যাম্প ত্যাগ করে রসুলপুরের আটপুকুর পার হয়ে ড্রেনের ভিতর দিয়ে মধুমল্লারডাঙ্গী বর্তমান খুলনা রোড মোড় হয়ে চৌধুরীপাড়ার মান্নান চৌধুরীর বাড়ি অতিক্রম করে পাওয়ারহাউজ এর সম্মুখে এসে আমরা (পাওয়ারহাউজ এর) ভিতরে ঢোকার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। এসময় ভিতরে কেউ ঢুকতে চাচ্ছিলেননা। একপর্যায়ে সোনা মিয়া রাজি হয়ে ভিতরে ঢুকলেন। সোনা মিয়ার পায়ে তার জড়িয়ে যাওয়ায় বাইরে বের হয়ে আসল। তারপর কে ঢুকবে ভিতরে এমন প্রশ্ন করে সোনা মিয়া। তখন সার্জেন্ট গৌর চন্দ্র মন্ডল ভিতরে ঢুকলেন। তার সাথে একে একে আশুসহ আরও কয়েকজন ভিতরে ঢুকলেন এবং ২ টা টাইম বোম রেখে বাইরে বের হয়ে আমরা কামারবাড়ি ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার পথে বর্তমান এসপি বাংলোর সামনে তৎকালীন আহমদ মিলিটারীর বাড়ির আম বাগানে পৌঁছাতেই বোম বাস্ট এর শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। তখন এ্যালোসুইচ নামে একটি ঘড়ি গেরিলা কমান্ডার নাজমুস শাহাদাৎ এর কাছে ছিল। তিনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সোয়া ১১ টা বাজে। আমরা লোকেমুখে শুনেছিলাম পাওয়ারহাউজ গুড়িয়ে গিয়েছে। আনন্দে আমাদের সাথে থাকা সদস্যরা সিগারেট ফুঁকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নাজমুস শাহাদাৎ নিষেধ করায় তারা আর সিগারেট না ফুঁকে একসাথে ঘোনার কামারবাড়ি ক্যাম্পে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি করে রওনা হয়।

তারা আরও জানান, সে সময় যারা সাতক্ষীরা পাওয়ারহাউজ অপারেশনে যতটুকু অবদান রেখেছিলেন তাদের ততটুকু সম্মান দেওয়া উচিত। তবে সাতক্ষীরায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদকের সাথে একেকজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা একেকভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করছে যা সুনিদিষ্ট তথ্যের পরিপন্থী। তাই, তাদের প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে সংবাদ পরিবেশনের আহবান জানান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা।

তৎকালীন পাওয়ারহাউজ অপারশনের সদস্য ও বর্তমান ওয়েলস বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, ইউ.কে এর সভাপতি আনিছুর রহমান খান বাবুল জানান, এতদিন পর দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, কিছুদিন আগে সোনা ভাইয়ের দেওয়া এক সাক্ষাতকার আমার নজরে আসার পরেই এর জবাব দিতে বাধ্য হচ্ছি কারণ আমি নিজেই সাতক্ষীরা পাওয়ার হাউজ অপারেশনে ছিলাম। তার কিছু তথ্যাদি এখন দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করছি। আমাদের সেই দিনকার ভারতীয় কমান্ডার কাপ্টেন সরমা নির্দেশে আমরা কয়েকজন সাতক্ষীরা শহরে অপারেশনে আসি। কতজন তা এতদিনে ভুলে গেছে। তবে আমাদের সেদিনের লিডার ছিলেন নজমুস শাহাদাত ভাই (যাকে মামা বলে সম্বোধন করতাম)। সেকেন্ড-ইন-কমান্ডার ছিল আব্দুল্লাহ। তিনি আজ না ফেরার দেশে। আমার প্রশ্ন হ’ল সোনা ভাই যদি সে সময় লিডার হয়। শাহাদাত মামা আর আব্দুল্লাহ কি ছিল এবং সেই অপারেশনে তারাও ছিল। তাহলে তারা দুজন কি ছিল তার জবাব তো চাইতেই পারি। আমরা আসি বর্তমান সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় এবং সাতক্ষীরা পাওয়ার হাউজ অপারেশনে। আমরা যখন সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপরীত দিকের কাঠের সেতুর উপর দাঁড়ানো অবস্থায় থেকে এই অপারেশনের কিছু পরিবর্তন করেন আমাদের লিডার শাহাদাত ভাই এবং পরে লিডার আব্দুল্লাহ সমর্থন করার পর আমরা সবাই সমর্থন করি। এরপর আমরা পাওয়ার উড়াবার জন্য নিদিষ্ট স্থানে পৌঁছাই। নিদের্শমত এবং ছোট খাটো হালকা দুজনকে সনাক্ত করা হল যাতে সহজভাবে পাওয়ার হাউজের ভিতরে যেতে পারে। তখনকার চারিদিক ছিল কাঁটাতারের বেড়া যে কোনো মোটা গোসের বা ভারী লোকের পক্ষে ভিতরে ঢোকা একেবারেই অসম্ভব ছিল, তাই খুবই হালকা পাতলা দুজনকে বাছা হল অথ্যাৎ আব্দুল মালেক সোনা ভাই এবং দ্বিতীয় জন গৌর চন্দ্র ম-লী। তাদের দুজনের হাতে দুটি টাইম বোম পেন্সিল ফিট করা বোম দেওয়া হয়, তারা যথারীতি দুটি জেনারেটরের নীচে স্থাপন করে ফিরে আসে এবং টাইম পেন্সিল টিপ দিয়ে অন করে দিয়ে। আমরা পাওয়ার হাউজের উত্তরের বেড়া দেওয়া বাগানের ভিতরে পজিশন নিয়ে স্ব-স্ব কাজে ব্যস্ত হই। সব কাজ যখন সম্পূর্ণ হলে আমরা আমাদের কামারবাড়ি ক্যাম্প ঘোনার উদ্দেশ্যে রওনা হই। এই হল আমাদের সেদিনকার অপারেশন। তারপর আবার যে লোকটির জন্য সাতক্ষীরা শহরের যাবতীয় তথ্যাদি সরবারহ করত তার নাম নজরুল যে এখনও পর্যন্ত দর্জির কাজ করে সংসার নির্বাহ করে যাচ্ছে। এছাড়া নজরুলের দেওয়া সংবাদের উপর ভিত্তি করে আমাদের সাতক্ষীরা শহর প্রদক্ষিণ করতে অনেকটা সুবিধে হয়েছিল। তারপরেও তার নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়নি বা যারা তার ঘনিষ্ঠ ছিল তারা হয়ত হতে দেয়নি। আমার বেলায়ও একই রকম যুদ্ধ চলেছে। জানিনা কেন আমাকে নিয়ে এমন খেলা হ’চ্ছে? কাউকে বেশী ঘাটানো ঠিক নয়। সোনা ভাইয়ের সাক্ষাতকারটি পড়লাম। সেখানে আমাদের কয়েকজনের নাম নেই এবং অপরিচিত কয়েকজনের নাম সাক্ষাতকারে তুলে ধরা হয়েছে। যা আমাদের কয়েকজনকে ব্যথিত করেছে। আমাদের ইচ্ছে সত্য বেরিয়ে আসুক তারজন্য আমরা অপেক্ষায় থাকলাম। আমাদের অনুরোধ এখন আপনিই পারেন সেদিনের সঠিক ঘটনাবলী তুলে ধরার। তা না হলে বিকৃত হতে থাকবে সাতক্ষীরা পাওয়ারহাউজ অপারেশনের সত্য ইতিহাস।

গেরিলা কমান্ডার নাজমুস শাহাদাৎ জানান, আমি ৮ নং সেক্টরের গেরিলা কমান্ডার ছিলাম। সাতক্ষীরা পাওয়ার হাউজ গুড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সম্ভাবত নভেম্বর এর ৩য় সপ্তাহে তৎকালীন ঝিনাইদহের এসডিও ক্যাম্পের কাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ (বীর বিক্রম) আমাদের ডেকে পাঠান। আমরা তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। আমরা যখন ক্যাম্পে গিয়েছিলাম তখন ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের প্রভাষক ও ৮ নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে কাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ আমাদের ৩ দিনের মধ্যে সাতক্ষীরা পাওয়ার হাউজ গুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তাদের কাছ থেকে ৭ দিন সময় চেয়ে নিলেও ৫ দিনের মধ্যে সাতক্ষীরা পাওয়ারহাউজ গুড়িয়ে দিয়েছিলাম আমরা। সেদিন পনে ১১ টায় পাওয়ার হাউজের মধ্যে ( ইঞ্জিন এর তলায়) ২ টি বোমা আমরা রেখে এসেছিলাম। তখন এ্যালোসুইচ নামে একটি ঘড়ি আমার কাছে ছিল। সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম পোনো ১১ টা বাজে। তার আধ ঘন্টার মধ্যে বোমাটি বাস্ট হয়ে গিয়েছিল। সে খবর ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ শুনে আমাদের প্রশংসা করলেন এবং তারপর আমাদের আরও অনেক গুলো অপারেশনে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশে আমরা প্রায় সকল অপারেশন সাকসেস্ করতে সক্ষম হয়েছিলাম।

তিনি আরও জানান, ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ এর নেতৃত্বে অস্থায়ী বেতার কেন্দ্র কল্যাণী ভারত থেকে ঘোষণা করা হয় সাতক্ষীরা পাওয়ার হাউজ গুড়িয়ে দিয়েছে কামারবাড়ি ঘোনা ক্যাম্পের সহকারি কমা-ার শেখ আব্দুল মালেক ওরফে সোনা মিয়া ও গেরিলা কমা-ার নজমুস শাহাদাৎ নেতৃত্বে একদল গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা।

নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি এড. ফাইমুল হক কিসলু জানান, ১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে মুক্তিকামী মানুষ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অপারেশন করেছিল তার মধ্যে সাতক্ষীরার পাওয়ার হাউজ অপারেশন অনবদ্য। এই অপারেশনে মহানায়কেরা সেদিন অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও তাদের কে ভুলতে বসেছে সাতক্ষীরার আপমর জনগণ। সাতক্ষীরার তরুণ প্রজম্মসহ সকল মানুষ কে তাদের কৃতিত্বের কথা জানানোর লক্ষে সংশ্লিষ্ট উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাওয়ার হাউজের সম্মুখে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানাই।
ঘোনার কামারবাড়ি ক্যাম্পের সার্জেন্ট গৌর চন্দ্র ম-ল জানান, ইটিনডি ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ সাতক্ষীরা পাওয়ারহাউজ গুড়িয়ে দেওয়ার লক্ষে ৮ নং সেক্টরের অধীনে ঘোনার কামারবাড়ি ক্যাম্পে একটি চিঠি পাঠায়। সে চিঠি মোতাবেক ক্যাম্পের সহকারি কমান্ডার সোনা মিয়া আমাকে ইটিনডি ক্যাম্পে পাঠায়। আমি সেখান থেকে পরামর্শ নিয়ে পাওয়ার হাউজ উড়ানোর সরঞ্জমাদি সংগ্রহের জন্য ক্যাম্পে রশিদ নামের একটা ছেলে সাথে দেখা করি। রশিদ আমাদের ২ টা টাইম বোমের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তারপর টাইম বোমটি আমাদের ক্যাম্পে আনা হয়েছিল। যখন পাওয়ার হাউজ অপারেশনের উদ্দেশ্যে আমরা ক্যাম্প থেকে রওনা হলাম তখন টাইম বোমটি সমস্তপথ বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন ঘোনার কামাববাড়ি ক্যাম্পের সহকারি কমান্ডার আব্দুল্লাহ, গেরিলা কমান্ডার নাজমুস শাহাদাৎ, সহকারি কমা-ার সোনা মিয়া। তারপর আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সু-কৌশলে পাওয়ারহাউজের মধ্যে টাইম বোম ২ টি রেখে বাস্ট করতে সক্ষম হয়েছিলাম এবং সেদিন আমাদের মিশন সার্থক হয়েছিল।

ঘোনার কামারবাড়ি ক্যাম্পের সহকারি কমা-ার সোনা মিয়া জানান, আমরা ইটিনডি ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ এর নির্দেশে সাতক্ষীরা পাওয়ারহাউজ অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এরজন্য আমরা ক্যাম্পে বিভিন্ন পরামর্শ মিটিংও করেছিলাম এবং অপরারেশনের জন্য সকল সরঞ্জমেরও ব্যবস্থা করেছিলাম। তারপর আমরা অপারেশনের জন্য ক্যাম্প ত্যাগ করে সাতক্ষীরা পাওয়ার হাউজ এর সম্মুখে এসে পৌঁছায় এবং ভিতরে ঢুকা নিয়ে আমাদের সদস্যদের মধ্যেও বাকবিতন্ড হয়। প্রথমে আমি পাওয়ার হাউজের ভিতরে একটি টাউম বোম নিয়ে প্রবেশ করি। কিন্তু ভিতরে ঢুকতেই আমার পায়ে তার জড়িয়ে যায়। আমি তখন হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এমতাবস্থায় আমি ভিতর থেকে বাইরে চলে আসি এবং অন্যদের ভিতরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলাম। তখন ভিতরে ঢুকতে অনেকে অনীহা প্রকাশ করলেও আমাদের ক্যাম্পের সার্জেন্ট গৌর চন্দ্র মন্ডল করেননি। তিনি সাহস করে টাইম বোম নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেন। তারপর তার সাথে আশুসহ আরও কয়েকজন প্রবেশ করলেন। তারা ভিতরে ২ টা টাইম বোম রেখে বাইরে বের হতেই কিছু সময় পর বোম বাস্ট হয়ে গেল। তখন আমরা আনন্দে বলতে থাকি আমাদের মিশন সাকসেস্ হয়েছে। এখন থেকে সাতক্ষীরা শহরে পাক বাহিনীর সদস্যরা আর কোনো তান্ডব চালাতে পারবে না বলতে বলতে আমরা ঘোনার কামারবাড়ি ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম এবং রসুলপুর হয়ে ক্যাম্পে ফিরে গেলাম। সেদিন অপারেশনে সাকসেস্ এর খবর শুনে ইটিনডি ইটিনডি ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ খুবই খুশি হয়েছিলেন। তারপরও আমরা ক্যাম্পের সদস্যদের নিয়ে অনেক অপারেশন করেছি। কিন্তু সাতক্ষীরা পাওয়ার হাউজের মতো হয়নি। পাওয়ার হাউজ অপারেশনে গেরিলা কমান্ডার নাজমুস শাহাদাৎ, আব্দুল্লাহ, সার্জেন্ট গৌর চন্দ্র মন্ডল সদস্য আশরাফ হোসেন ওরফে আশু, আব্দুর রফিক ওরফে রফিক, আব্দুল মান্নান ওরফে মান্নান, কাছেদ আলী ওরফে কাছেদ, আনিছুর রহমান খান বাবুল, কামরুজ্জামান বাবু, নজরুল ইসলাম ওরফে নজরুল, ওসমান, তথ্য আদান-প্রদানকারি বকচারার আব্বাসও ভূমিকা রেখেছিল। আমাদের অবদানের কথা সাতক্ষীরাবাসি কখনও ভুলতে পারেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *