Spread the love

জিএম জাকির হোসেন: সাতক্ষীরায় কর্মরত বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। চিকিৎসকের রুম থেকে বের হতে না হতেই রোগীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাটানি আর ছবি তোলা শুরু করেন তারা। কোনরকম অনুমতি না নিয়েই হাত থেকে কেড়ে নেন রোগীর ব্যবস্থাপত্র। বেশ কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে এমন অবস্থা লক্ষ করা গেছে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের এক ডাক্তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শুধুমাত্র প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার দুপুর ১টার পর হতে ডাক্তার ভিজিট করতে পারবেন আর বাকি দিন ডাক্তার ভিজিট করতে পারবেননা ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। এছাড়া হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কোন রোগীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে ছবি উঠাতে পারবেন না। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল কতৃপক্ষ বার বার মিটিং করে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন।  তবে তারা এ বিষয়টিতে কোনভাবে কর্ণপাত করছেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে চলছে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের এমন উপদ্রব। এতে বিব্রতবোধ করছেন রোগী এবং তাদের সাথে আসা স্বজনরা। সরকারি এই হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ডাক্তার দেখাতে প্রতিদিন ছুটে আসেন হাজার হাজার রোগী। কিন্তু রোগী দেখার সময় ওই ঔষধ প্রতিনিধিরা ডাক্তারদের রুমে ঢুকে তাদের কোম্পানীর ঔষধ সম্পর্কে লেকচার দিয়ে সময় নষ্ট করেন। আর এদিকে অসহায় রোগী ও তাদের স্বজনরা বাইরে ঠায় দাড়িয়ে থাকেন সিরিয়ালের জন্য। তারপর সিরিয়াল পেয়ে যখন রোগীরা ডাক্তার দেখিয়ে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাইরে বের হন তখনই কোনরকম অনুমতি না নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের হাত থেকে কেড়ে নেন ব্যবস্থাপত্র। তারপর একাধিক ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা শুরু করেন পালাক্রমে ছবি তোলা। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ঢুকলে মনে হয় চিকিৎসা নিতে রোগী এবং রোগীর স্বজনরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের কাছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পপুলার, ইনসেপটা, এ্যারিষ্টোফার্মা, হেলথ কেয়ার, অপসোনিন, বেক্সিমকো, স্কয়ার, রেনেটা, এসকেএফ, একমি’র মতো শতাধিক ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা সকাল থেকে ভিড় করে প্রতিটি বিভাগের ডাক্তারদের রুমের সামনে আর হাসপাতালের গেটে।

নিষেধাজ্ঞা স্বত্তেও তারা কেন এভাবে রোগীদের ভোগান্তি দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি সাতক্ষীরা ভিশন. কমকে জানান, পদোন্নতি এবং ঔষধ কোম্পানীর টার্গেট পূরণ করতেই রোগীর কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে নিশ্চিত হতে চান কোন কোন কোম্পানীর ঔষধ লেখা হয়েছে। নিজের পদোন্নতি এবং চাকুরি টিকিয়ে রাখতেই তারা ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করেন।

তারা আরো বলেন, তাদের কোম্পানীর ঔষধ লেখার কারণে ডাক্তারদের প্রতিমাসে কোম্পানী থেকে উপঢৌকন দেওয়া হয়। যে ডাক্তার যত বেশি ঔষধ লেখেন, তাদেরকে বেশি উপঢৌকন দেওয়া হয়।

সরেজমিনে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বর্হিবিভাগের ডাক্তার দেখিয়ে বের হতেই ভাদড়া হতে আগত রোগী রহিমা খাতুনের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নেন বেশ কয়েকজন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি। এতে রহিমা খাতুন বিরক্ত হলেও তখন কিছু বলেননি। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি ‘এদের জ্বালায় ডাক্তারও ঠিকমতো দেখাতে পারি না’ বলতে বলতে চলে যান। 

শহরের চালতেতলা এলাকার রবিউল ইসলাম নামের এক রোগী বলেন, চিকিৎসা নিতে এসে ঔষধ কোম্পানীর লোকসহ অনেক দালালের হাতে পড়তে হচ্ছে। তারা পঙ্কপালের মতো এসে আমাকে ঘিরে ধরে প্রেসক্রিপশন কেড়ে নিয়ে ছবি তুলতে শুরু করে। ছবি তোলার কারণ জানেেত চাইলে তারা বলেন ‘এটা আমাদের ডিউটি। ছবি না তুললে আমাদের চাকরি থাকবে না।’

শুধু রহিমা খাতুন বা রবিউল ইসলাম নয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীদের সাথে এ রকম ব্যবহার করা হচ্ছে এমনটাই দেখা গেছে। যেটা রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য খুবই বিরক্তিকর ও মানসিক ভোগান্তিও বটে।

এদিকে হাসপাতালের একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানায়,  সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের অভ্যন্তরে যাতে কোন রোগীর কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে কোন ঔষধ প্রতিনিধি ছবি তুলতে না পারেন সে ব্যাপারে দায়িত্ব পালন করার কথা ওই হাসপাতালের কর্মচারী হারুন-অর-রশিদের। তবে তিনি তাদেরকে কোনভাবে নিষেধ না করে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে তাদেরকে হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেন বলে অভিযোগ আছে।

এদিকে তার সত্যতাও পাওয়া গেছে হাসপাতালে সরেজমিনে যেয়ে। সেখানে যেয়ে দেখা গেছে হারুণ অর রশিদ হাসপাতালের অভ্যন্তরের ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের বাইরে যেতে না বলে বরং তাদের সাথে খোশগল্প করছেন।

তবে হাসপাতালের ওই কর্মচারী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওটা আমার একার দায়িত্ব না। ডাক্তাররা যদি ঢুকার সুযোগ না দেন তবে তারা ঢুকার সাহস পায়না। আপনারা ছবি তুলে নিউজ করেন।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মোঃ হোসাইন সাফায়াত বলেন, কোন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ছবি তোলার সুযোগ নেই। তাছাড়া তারা সপ্তাহে দুই দিন ব্যতীত ডাক্তার ভিজিট করতে পারবেন না। আমরা বারবার এ ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করেছি। এরপরও যদি তারা না শোনে তবে অবশ্যই তাদের ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *