Spread the love

শেখ বাদশা, আশাশুনি: ১৯৭১সালে পাকিস্থানী পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বীকৃতি পাওয়ার পরও মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সাতক্ষীরার আশাশুনি সদর ইউনিয়নের কোদন্ডা গ্রামের মৃত তফেল মোল্যার ছেলে আবুল কাসেম মোল্যা। যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছিলেন তিনি।

তার স্ত্রী আমেনা বেগম বর্তমানে আশাশুনির শ্রীউলা গ্রামে জামাই আব্দুর রহিম সরদারের অস্থায়ী সরকারী জায়গায় বসবাস করছে। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বিভিন্ন সরকারী দপ্তর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে তিনি গেলেও কোন সরকারী সহযোগিতা ও তার স্বামীর মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি না পাওয়ায় অসীম দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

কাসেম মোল্যার স্ত্রী আমেনা বিবি বলেন, বিয়ের মাত্র কয়েক বছর পর একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান ও আমাকে রেখে আমার স্বামী ১৯৭১সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পাক হানাদার বাহির উপর। কিন্তু আর দেখা হয়নি তার সাথে।
১৯৭১ সালের বাংলা ১১ কার্তিক রোজার মাসের সকাল বেলা বিলের মধ্য থেকে ধরে নিয়ে সদরের কোদন্ডা সড়কের কালভার্ট এর পাশে দাঁড় করিয়ে গুলি করে নৃশংস ভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করে পাক-হানাদার বাহিনী। পরে রাতের আধারে লাশ নিজের একটি সাদা রংয়ের শাড়ি দিয়ে কাফনের কাপড় বানিয়ে নিজের হাতে দাফন করি।

দেশ স্বাধীনের পর শিশু বাচ্চাকে নিয়ে যখন পথে পথে ঘুরছিলাম তখন একই এলাকার রনজিৎ এর সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ঘটনার বিবরণ জানিয়ে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলাম । চিঠির জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালিন খুলনা জেলা প্রশাসক এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে পরিবারের সাহায্যার্থে আমাকে দুই হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করেন। সাথে বঙ্গবন্ধুর লেখা আমার পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে একটি চিঠিও ছিলো। সেই চিঠির স্বারক নং প্র/ঐ/ক/৬-৪-৭২/শিউ/৪৫৩. তাং ২৪/০২ এবং চেক নং সি;এ ০৩৪০৫৩। পরে আশাশুনি সদরের তৎকালিন ইউপি চেয়ারম্যান আমজেদ আলীর মাধ্যমে আমার স্বামীর মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য ২৫০টাকা ভাতা পেয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীর ভিটাবাড়ী বলতে কিছুই ছিলো না। শিশু কন্যাকে নিয়ে পথে পথে বসবাস করেছি। আমার স্বামীর অন্যান্য ভাইয়েরা সরকারী জায়গায় বসবাস করতেন এবং এখনও করেন। 

মৃত আবুল কাসেম মোল্যার আপন সহদর ভাই দূর্গাপুর আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা লুৎফর রহমান বলেন, কোদন্ডা গ্রামের মৃত বড় পাগলা ফকিরের ছেলে জিয়াদ আলী ফকির, মেছের সানার ছেলে মফেজউদ্দীন সানা এবং আমার ভাই আবুল কাসেম মোল্যাসহ কয়েকজন মিলে খাজরা ইউনিয়নের হাতিরডাঙ্গা ক্যাম্পে বাবর আলী কমান্ডারের নেতৃত্বে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। 

এছাড়া কোদন্ডা এলাকা কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, মুক্তি বাহিনীতে যোগদান করায় পাক-হানাদার বাহিনী প্রকাশ্যে কোদন্ডা কালভার্টের উপর গুলি করে হত্যা করেছিলো আবুল কাসেম মোল্যাকে। দেশপ্রেমী আবুল কাসেম মোল্যার অসহায় স্ত্রী আমেনা বিবি স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে জীবনের পড়ন্ত বেলায় স্বামীর শেষ স্মৃতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া সেই চিঠি নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা মানবতার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে স্বাক্ষাতের শেষ আসা ব্যক্ত করেছেন।

অসহায় আমেনা বিবি স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে শেষ বয়সে তার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *