Spread the love

শেখ রিজাউল ইসলাম (বাবলু): সিডিউলে উল্লেখিত খাল খননের নকশা অনুযায়ী খনন করা হচ্ছে সাতক্ষীরা শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়ের খাল। ইতিমধ্যে বিনেরপোতা-দেবনগর, মাগুরা ও থানাঘাটা এলাকায় খালটি দৃশ্যমান হয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ডেল্টাপ্লান এর আওতায় জনস্বার্থে খাল পুনঃখননের জন্য বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘৬৪টি জেলার অধিনস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (১ম পর্যায়)’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাণ সায়ের খাল পুনঃখনন এর কাজ চলমান আছে। সাতক্ষীরা শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খালটি মোট ১৪.৫ কিঃমিঃ প্রবাহমান। খালটি ১৯৬২ সালের এস.এ রেকর্ড অনুযায়ী কোন কোন জায়গায় ব্যক্তি মালিকানা জমির উপর দিয়ে প্রবাহমান আছে এবং এস.এ রেকর্ড অনুযায়ী খালের অপর পাড় খাল ভরাট হওয়ায় দোকান-পাট, ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাজার গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধুমাত্র প্রবহমান খালটি পুনঃখনন করছে। বাংলাদেশ গেজেট পানি আইন অনুযায়ী ২০১৩ সনে ১৪ নং ধারায় ২০ নং কলামে উল্লেখ আছে-“ফোরশোর” অর্থ বৎসরের যেকোন সময় ভরাকটাল (Ordinary spring tide) এর সময় নদীর সর্বনিম্ন পানি স্থর (Low wate mark) হইতে সর্বোচ্চ পানি স্তর (High wate mark) এর মধ্যবর্তী অংশ; এবং Ports Act,1908(Act No. XV of1908) অনুযায়ী ঘোষিত নদী বন্দর ও সমুদ্র বন্দর এলাকার সর্বোচ্চ পানি স্তর হইতে নদীর তীর ৫০ (পঞ্চাশ) মিটার এবং অন্যান্য এলাকায় সর্বোচ্চ পানি স্তর হইতে ১০ (দশ) মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা। বাংলাদেশ গেজেট পানি আইন অনুযায়ী ২০১৩ সনে ১৪ নং ধারায় ৫ নং এর উপ-ধারা (৩) এর অধীন পানি ব্যবহারের সুবিধার্থে প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিমালিকানাধীন বা রাষ্ট্রীয় ভূমিতে বর্তস্বত্ত্ব (easement) থাকিবে।

তবে শর্ত থাকে যে, জলাধারের তীরবর্তী কোন ভূমি মালিকের উহার তলদেশ এবং ফোরশোরের উপর কোন প্রকার অধিকার থাকবে না। বাংলাদেশ গেজেট পানি আইন অনুযায়ী ২০১৩ সনে ১৪ নং ধারায় ২০ নং জলস্রোত স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিতকরণ-(১) উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কোন ব্যক্তি বা সংস্থা, কোন জলাধারে, তীরবর্তী হউক বা না হউক, স্থাপনা নির্মাণ করিয়া বা জলাধার ভরাট করিয়া বা জলাধার হইতে মাটি বা বালু উওোলন করিয়া জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ বা উহার প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি বা উহার গতিপথ পরিবর্তন বা পরিবর্তনের চেষ্টা করিতে পারবে না। আরও শর্ত থাকে যে, প্রাকৃতিক বন্যার কবল হতে জনসাধারণ ও তাদের সাথে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুরোধ ক্রমে ধারা ২১ এর সামগ্রিকতাকে ক্ষুন্ন না করিয়া জলাধারে বন নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা যাইবে।(২) জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে নির্বাহী কমিটি, এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষ্যে, সুরক্ষা আদেশ দ্বারা যেকোন বিধি-নিষেধ আরোপ করিতে পারিবে। খালের দাবীকৃত আংশিক জায়গাটি ওই আইন অনুযায়ী প্রবাহমান খাল হিসেবে গণ্য হওয়ায় যাহা বাংলাদেশ সরকারের ১ নং খাস খতিয়ানভূক্ত। সে কারণে জনস্বার্থে প্রবাহমান খালটি পুনঃ খনন কাজ চলমান আছে।

আরো জানা যায়, খালটি পুনঃ খনন করা না হলে বিস্তীর্ণ এলাকা বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জানমাল, ফসল, চিংড়ী ঘের, স্কুল, মসজিদ,সাদ্রাসা মন্দির ও ঘরবাড়ী ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হওয়ার সমূহ সম্ভবনা থাকবে। বিগত দিন গুলোতে উক্ত খাল খনন না হওয়ার কারনে সদর থানাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার জানমালের ব্যাপক ভাবে ক্ষতি হয়েছে। এই বিষয়কে মাথায় রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সাতক্ষীরা শহরের প্রাণ কেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী প্রাণসায়ের খাল খনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খাল খননের শুরুতে বিদ্বেষিত মানুষের মুখে বহু অপপ্রচার শুনতে পাওয়া যায়। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের তত্তাবধায়নের দ্রুত গতিতে খাল খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সাইদুজ্জামান, রাজস্ব সার্ভেয়ার আহছানউল হক(কলিম), কার্যকারী সহকারী মোঃ বাবুল ও নবি হাসানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজস্ব সার্ভেয়ার আহছানউল হক (কলিম) বলেন, আমরা কোন অনিয়ম, দূর্ণীতি ছাড়াই সিডিউলে উল্লেখিত সময়ের ভিতরে খাল খনের কাজ সমাপ্ত করব ইনশাআল্লাহ। বর্তমানে খাল খনের নকশা অনুযায়ী খালটি দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। বিনেরপোতা-দেবনগর, মাগুরা ও থানাঘাটা এলাকায় খালটি দৃশ্যমান হয়েছে। যা দেখে মনে হচ্ছে “এ যেন খাল নয় নদী।”খাল খনন কার্য অত্র এলাকার সাধারন মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রসংশনীয় হয়েছে। অত্র এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা জানায় খাল পুনঃ খনন হওয়ায় তারা ইরি ধানের পানি সেচ ভাল ভাবে দিতে পারছে। এজন্য এবছর অধিক ফসল উৎপাদন হবে বলে তারা আশা করছে। এমনি ভাবে সম্পূর্ণ খালটি খনন করা হলে সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়ের খাল তার প্রাণ ফিরে পাবে। আর তার দু’ধারে বসবাসকৃত জনসাধারণ পাবে বিনোদনের এক প্রাকৃতিক পরিবেশ।

জাতীয় পার্টি নেতা আনোয়ার জাহিদ তপন জানান, প্রাণ সায়ের খাল খননের জন্য সাতক্ষীরাবাসী দীর্ঘদিন হতে বহু আন্দোলন সংগ্রাম করছে। আজ সেই আন্দোলন সংগ্রাম সফল হয়েছে। আমরা খাল খননের সাথে সম্পৃক্ত সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *