মুনসুর রহমান: জেলা ও দায়রা জজ পদে পদোন্নতি পেয়েছেন সাতক্ষীরার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা পাভেল রায়হান।
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৩ এর উপসচিব (প্রশাসন-১) শেখ গোলাম মাহবুব কর্তৃক ১৯ জানুয়ারি ২০১৫-৪০ নম্বর স্মারকে স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মোস্তফা পাভেল রায়হানসহ ৩৩ জন বিচার বিভাগীয় সিনিয়র কর্মকর্তাকে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে নতুন কর্মস্থলে নিয়োগ দিয়েছেন।
প্রজ্ঞাপনে সাতক্ষীরার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা পাভেল রায়হানের নাম ২০ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে এবং মোস্তফা পাভেল রায়হানকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩, রংপুর এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার ঝিকরগাছা পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের ১৯৭২ সালের পহেলা মার্চ মোস্তফা পাভেল রায়হান জম্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মোস্তফা আলী আহমেদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত সুনাম ও সততার সাথে সাতক্ষীরার সকল বিচার প্রার্থী মানুষের কাছে শ্রদ্ধার ও প্রিয় বিচারক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন।
যশোর ক্যান্টমেন্ট কলেজ থেকে ১৯৮৯ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে এলএলবি (অনার্স) এবং এমএলএম (মাস্টার্স) ডিগ্রী অর্জন করেন।
২২তম বিসিএস এর মাধ্যমে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে সহকারি জজ হিসেবে খুলনায় যোগদান করেন তিনি। এরপর কিছুসময় তিনি অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৫ সালে বাগেরহাটে যুগ্ম জেলা জজ, পটুয়াখালীতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং পটুয়াখালীতে কর্মরত থাকাবস্থায় ভোলা ও বরগুনায় অবকাশকালীন জজ হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
জাতীয় নির্বাচন (২০১৮) এর পূর্বেই ৩০ মে সাতক্ষীরায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। চাকুরীর পূর্বে কিছুসময় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে আইন ব্যবসা করেন তিনি।
সম্প্রতি তিনি ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমী, ভুপাল, ভারত থেকে গ্রাজুয়েট ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্মজীবনে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তিনি। তার মধ্যে ন্যাশনাল ল স্কুল বেঙ্গালুর থেকে ‘রিফিউজি ল’ এর উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ অন্যতম। সম্প্রতি অষ্ট্রেলিয়ার ওয়েসর্টান ইউনির্ভাসিটি, সিডনীতে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হয়েছেন তিনি।
বিচারিক কার্যক্রমের পাশাপাশি একজন দক্ষ ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া অনুরাগী এবং ক্রীড়া সংগঠকও হিসেবেও তাঁর পরিচিতি আছে । তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন টেনিস টুর্নামেন্টে নেতৃত্ব দিয়ে কৃতিতের সাথে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। সম্প্রতি তিনি সাতক্ষীরা টেনিস ক্লাব আয়োজিত টেনিস টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ানশীপ অর্জন করেন।
যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক জানান, শিক্ষিত পরিবারের সন্তান মোস্তফা পাভেল রায়হান। তাঁর মামা সাবেক রাষ্ট্রদূত, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ও তাঁর একমাত্র বোন ইংল্যান্ড প্রবাসী। মোস্তফা পাভেল রায়হান এর বাবা ও মা সরকারি চাকুরীজীবী ছিলেন। আমরা ছোটবেলায় মনে করতাম বাবা ও মায়ের মুখ একদিন উজ্বল করবেন তিনি। আজ তা সত্যি হয়েছে। বিনয়ী ও সদালাপী মোস্তফা পাভেল রায়হান আমাদের এলাকা তথা উপজেলা তথা জেলাবাসীর গর্ব। আগামীতে তিনি এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি উপজেলা ও জেলার উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন বলে প্রত্যাশা করি।
ঝিকরগাছা পৌরসভার মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল তাঁর পদোন্নতির খবর শুনে জানান, আমাদের উপজেলার স্বনামধন্য এক মুসলিম পরবারের সন্তান মোস্তফা পাভেল রায়হান। তিনি আমার প্রতিবেশী। বলতে গেলে একই সাথে বেড়ে ওঠা। ছোটবেলায় খুবই নম্র ও ভদ্র ছিলেন মোস্তফা পাভেল রায়হান। তখন আমাদের মনে হতো তিনি একদিন শিক্ষিত হয়ে দেশের অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হবেন। সত্যিইও আজ আমাদের সেই স্বপ্ন সফল হয়েছে। আমরা খুবই খুশি ও আনন্দিত। আমরা পৌরসভাবাসী তাঁর জন্য গর্বিত এবং সবসময় তাঁর জন্য মঙ্গল কামনা করি।
সাতক্ষীরার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা পাভেল রায়হান জেলা ও দায়রা জজ পদে পদোন্নতি পাওয়ায় আনন্দে আপ্লুত হয়ে অতিরিক্ত পিপি আ্যড. ওকালত হোসেন জানান, সাতক্ষীরায় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন সময়ে একটি মডেল বিচারিক কার্যক্রম উপহার দিয়ে সর্বশ্রেণি পেশার বিচারপ্রার্থী মানুষের হৃদয়ে আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন মোস্তফা পাভেল রায়হান। সাতক্ষীরার বিচার বিভাগের কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধিতেও তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করেন।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সালমা আক্তার জানান, বিচার বিভাগের একজন উজ্বল নক্ষত্র মোস্তফা পাভেল রায়হান। বিচারিক ও প্রশাসনিক কাজে তাঁর মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। আমরা তাঁর নেতৃত্বে সাতক্ষীরা জেলায় ন্যায় বিচারকে সমুন্নত রাখার জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি বলে গর্ব বোধ করি।
যশোর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ এর উপাধ্যক্ষ ইকবাল কবির মোহন জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৮৯ সালে এইচএসসি সফলতার সাথে পাশ করেন মোস্তফা পাভেল রায়হান। শুনেছি, তিনি কলেজে পড়াকালীন সময়ে খুবই বিনয়ী ও সদালাপী ছিলেন। দীর্ঘ চাকুরীজীবনে তিনি (জেলা ও দায়রা জজ) পদে পদোন্নতি পাওয়া আমরা কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
যশোর-০২ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) ডাঃ নাসিরউদ্দিন জানান, পূর্বে কেউ আমাদের উপজেলায় কখনও জেলা ও দায়রা জজ পদে পদোন্নতি পাননি। সেদিক থেকে মোস্তফা পাভেল রায়হান প্রথম। তার দীর্ঘ চাকরি জীবনে সবসময় ন্যায়, নীতি, আদর্শকে সর্বোদ্ধে স্থান দিয়েছেন। হাস্যোজ্জ্বল মোস্তফা পাভেল রায়হান সত্যিই একজন দেশ-মাতৃকাপ্রেমী মানুষ। বিচারপ্রার্থীরা তাঁর কাছ থেকে সবসময় যেন ন্যায়-বিচার পায় সেই প্রত্যাশা করি।
মোস্তফা পাভেল রায়হান তার সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলস কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জানান, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে বিচার বিভাগে যোগদান করেছি। সততা ও নিষ্টার সাথে এই গুরু দায়িত্ব যাতে সফলভাবে পালন করতে পারি তার জন্য আমি সকল-শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে দোয়া প্রত্যাশা করছি।