Spread the love

কালিগঞ্জ প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর বাংলাদেশের ইতিহাস অভিন্ন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রায় সব আন্দোলনই অঙ্কুরিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী প্রাঙ্গণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম। একটি জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী ও জ্ঞান চর্চার প্রধান বাতিঘর হিসেবে এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পালাবদলের প্রধানতম কেন্দ্র হিসেবে বিগত একশ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলায় রয়েছে বৈচিত্রময় আড়ম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার অবদান ও সম্পৃক্ততা ছিল অনস্বীকার্য। আহ্ছানিয়া মিশনের সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক ড. আবদুল মজিদ তার বক্তব্যে বলেন, অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একবারে সূচনালগ্ন হতে প্রতিষ্ঠার দিন পর্যন্ত প্রত্যক্ষ, বলিষ্ঠ-সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন আহ্ছানউল্লা।

১৯১২ সালে নাথান কমিশনের টিচিং সাব-কমিটির সদস্য, ১৯১৪ সালে হর্ণেল কমিটির সদস্য, ১৯১৭ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের কাছে সুস্পষ্ট বক্তব্য, ১৯১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার খসড়া আইনের ধারা-উপধারার ওপর মতামত প্রদানকালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট বিশেষ কমিটিতে একমাত্র বাঙালী মুসলমান সদস্য খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেন।

সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের চাপের মুখেও নিজের অবস্থানে অচল অটল থাকেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর রশিদ আসকারী খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার বিভিন্ন সামাজিক সংস্কার ও সাহিত্য অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, অসামান্য মনীষার বিকিরণে, কর্মের ব্যাপ্তিতে, সুচিন্তার উৎকর্ষে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ছিলেন বাঙালি মুসলমানের রেনেসাঁযুগের অগ্রগণ্য এক উজ্জ্বল মনস্বী।

শিক্ষা চেতনায় তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণশক্তি, ব্যক্তিত্বের অভিনবত্ব, নিরীক্ষাপ্রবণতা আর স্বজাতিকে ক্রমশ উত্তরণের প্রয়াসে সময়ের প্রয়োজনে তিনি অনিবার্য হয়ে উঠেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অগ্রগণ্য ভমিকার বাইরেও অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা বিস্তারে তিনি অসংখ্য-অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। পরীক্ষার খাতায় রোল নম্বর লেখার প্রবর্তনসহ অসংখ্য শিক্ষা সংস্কারে তিনি অগ্রদূতের ভ‚মিকা পালন করেছিলেন।

নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠাতা খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার ১৪৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১০টায় মাজার প্রাঙ্গণে এই সেমিনারের অয়োজন করে। কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এম পির সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল ও নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের প্রাক্তন সভাপতি আলহাজ্জ মুহাম্মদ সেলিমউল্লাহ।

খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইনস্টিউিটের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মজিবর রহমান, খানবাহদুর আহ্ছানউল্লা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এ এফ এম এনামুল হক, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ মো. এনামুল হক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *