Spread the love

নাজমুল শাহাদাৎ (জাকির): সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বহুল প্রতীক্ষিত কাউন্সিল ও ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ ৫ বছর পর অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনটি ঘিরে কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন বইছে উৎসবের আমেজ তেমনি এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মাঝে।

আজকের সম্মেলনে কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। তবে সভাপতি পদে কলারোয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, তালা-কলারোয়ার সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব বি.এম নজরুল ইসলামের নাম জানা গেলেও সম্মেলনে নতুন কাউন্সিলর বা হালনাগাদ নতুন কাউন্সিলর না করা হলে তিনি সভাপতি পদে প্রতিদন্ধিতা করবেননা বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে সম্মেলনের আগেরদিন কলারোয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি ও লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সম্মেলনে সভাপতি পদে নিজেকে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। তবে কলারোয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ-সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু দলীয় সির্ধান্তকে অবমাননা করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধিতা করে নির্বাচন করায় এবারের সম্মেলনে প্রার্থীতা হতে পারবেন না।

তবে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে তিনি না দাড়াতে পারলেও তার গ্রুপের সমর্থিত একজন সভাপতি পদে লড়বেন। সাধারণ সম্পাদক পদে কলারোয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কেরালকাতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান স ম মোরর্শেদ আলী ভিপি, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক আহবায়ক সাজ্জাদুর রহমান খান চৌধুরী মজনু, জেলা আওয়ামীলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব আরাফাত হোসেন, জেলা পরিষদ সদস্য আলহাজ্ব শেখ আমজাদ হোসেন, কলারোয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আসাদুজ্জামান শাহাজাদা, যুগিখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল হাসানের নাম শোনা যাচ্ছে।

তবে কৌশলগত কারনে স্বপন ও লাল্টু গ্রুপের কেউ তাদের মনোনীত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করতে চাইছেননা বলে জানান নেতাকর্মীরা।

তবে দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা আওয়ামীলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আরাফাত হোসেনকে স্বপন সমর্থিত গ্রুপের সাধারণ-সম্পাদক প্রার্থী ও কলারোয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক স ম মোরর্শেদ আলী ভিপিকে লাল্টু সমর্থিত গ্রুপের সাধারণ-সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা গেলেও তারা নিজেদের স্বঘোষিত প্রার্থী হিসেবে দাবি করেছেন।

এদিকে সম্মেলন সফল করতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে সম্মেলন ঘিরে বিরাজ করছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি কলারোয়া শহরে বহিরাগত অবৈধ অস্ত্রধারীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতারা জানান, সম্মেলনে কমিটিতে পদ পাওয়া না পাওয়াকে নিয়ে প্রার্থীদের অনুসারীদের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, বিগত পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্রকরে কলারোয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যেকার সম্পর্কের ভাঙ্গন ধরে। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় স্বপন ও লাল্টু সমর্থিত দু’পক্ষের সংঘর্ষে ব্যাপক ভাঙচুর ও লোকজন আহত হয়েছিল।

সম্মেলনকে ঘিরে দু-গ্রুপের নেতাকর্মীরা জানান, কোন অনিয়মের মাধ্যমে সম্মেলন করার চেষ্টা করা হলে তার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। কোন বির্তকিত কমিটি মেনে নেয়া হবে না বলে নিশ্চিত করেন এসব নেতারা। এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে কলারোয়ার বিভিন্ন জায়গায় স্বপন ও লাল্টু সমর্থিত দু-গ্রুপের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই এবারের সম্মেলনের নির্ধারিত তারিখে অথবা আগে ও পরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে। এমনই আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়।

কাউন্সিল বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন বলেন- ‘আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনার মধ্যে থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন সম্পন্ন করবো। আমাদের নিজেদের মধ্যে নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রতিযোগিতা থাকলেও সেটা উৎসবমুখর পরিবেশে আনন্দঘন অবস্থাতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।’

তিনি আরো বলেন- ‘সভাপতি হিসেবে আমি নির্বাচিত আছি। এবারো সভাপতি প্রার্থী হিসেবে আমি দৃশ্যমান। এখন পর্যন্ত এ পদের প্রতিদ্বন্দি কারো কথা শুনি নাই। সুতরাং আমি আশাবাদী।’

দলটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন- ‘আমরা কাউন্সিল নির্বাচনে যাবো না। কারণ বর্তমান সভাপতি সাহেব দায়িত্ব পেয়ে বিগত ৫বছর আগে তার ইচ্ছামতো কমিটি গঠন করেছিলেন ও কাউন্সিলর নির্ধারণ করেছিলেন। সুতরাং আমরা কোন প্রহসনের নির্বাচনে যাবো না।’

তিনি আরো বলেন- ‘নতুনভাবে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন ও কাউন্সিলর নির্ধারণ করলে তাদের ভোটের রায় আমরা মেনে নেবো। উপজেলার সিংহভাগ আ.লীগের লোকজন আমার পক্ষে।’

‘তাদের পাতানো ফাঁদে আমরা পা দিবো না’ যোগ করেন তিনি।

লাল্টু অভিযোগ করে আরো বলেন- ‘প্রতিদ্বন্দি প্রতিপক্ষরা ইতোমধ্যে বাইরের এলাকা থেকে লোক নিয়ে এসেছে। আমরা শংকিত যে সুন্দর পরিবেশে থাকবে কিনা।’

তবে সম্মেলনকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে কলারোয়া উপজেলাসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, সম্মেলনকে ঘিরে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *