Spread the love

এসভি ডেস্ক: ইমাম গাজ্জালি (রহ.) তাঁর ছাত্রদের অজুর নিয়ম-কানুন শিখিয়ে বলেন, ‘অজুর শুরুতে তোমরা মিসওয়াক করবে অর্থাৎ দাঁত মেজে নেবে। দাঁত পরিষ্কার না থাকলে মানুষ তোমার থেকে কষ্ট পাবে। অজু করার সময় কাবামুখী হওয়া ভালো। শুরুতে আল্লাহর কাছে এই বলে নেবে, পরম দয়াময় আল্লাহর নামে অজু শুরু করছি।

হে আল্লাহ! শয়তানের ওয়াসওয়াসা ও ধোঁকা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। সে যেন আমার কাছে ঘেঁষতে না পারে। তারপর দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুতে ধুতে বলবে, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ভালো চাই।

বেশি চাই। খারাপ ও কম থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই। এরপর তিনবার কুলি করবে। এখানেও তুমি এই দোয়া পড়বে, হে আল্লাহ! আমাকে কোরআন তিলাওয়াত এবং বেশি বেশি জিকির করার তাওফিক দিন। দুনিয়া ও আখিরাতে যেন আপনার জিকিরের সঙ্গেই থাকতে পারি।

তিনবার নাকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করবে। তখন বলবে, হে আল্লাহ! আপনাকে খুশি রেখে বেহেশতের সুঘ্রাণ নেওয়ার তাওফিক দিন। জাহান্নামের দুর্গন্ধ থেকে আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন। তারপর পুরো মুখ ধুয়ে নেবে। তখন এ দোয়া পড়বে, হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দাদের চেহারায় যেদিন হাসি ফুটে উঠবে সেদিন তোমার নূর দিয়ে আমার চেহারাকে আলোকিত করে দিও। আর যেদিন তোমার শত্রুদের চেহারা কালো হয়ে যাবে, সেদিন আমাকে তুমি ভালোবাসার ডানা দিয়ে আগলে রেখো। তারপর ডান হাতের কনুইসহ ধুয়ে নেবে। বলবে, হে আল্লাহ! আমার ডান হাতে আমলনামা দিও। বাঁ-হাত ধোওয়ার সময় বলবে, হে আল্লাহ! আমার আমলনামা বাঁ-হাতে দিও না। হে প্রিয় তালিবে ইলম ইসলামের ছাত্র! তারপর তুমি মাথা মাসেহ করবে। মাথা মাসেহর সময় পড়বে, হে আল্লাহ! তোমার রহমত দিয়ে আমাকে ঢেকে নাও। তোমার কল্যাণগুলো আমার ওপর নাজিল কর। আমার জন্য জান্নাত আবশ্যক ও জাহান্নাম হারাম করে দাও। তারপর কান মাসেহ করবে আর বলবে, হে আল্লাহ! আমাকে তাদের দলে নিয়ে নিন, যারা উপদেশবাণী শোনে এবং মানে। ঘাড় মাসেহ করার সময় বলবে, হে আল্লাহ! আমার ঘাড়কে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে দিন। দয়া করে এ ঘাড়ে আপনি জাহান্নামের শিকল পরাবেন না। আমরা এখন অজুর শেষ দিকে চলে এসেছি। এবার ডান পায়ের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধোবে। বলবে, হে আল্লাহ! তোমার নেক বান্দাদের সঙ্গে আমার পা সিরাতুল মুস্তাকিমে দৃঢ় রাখো। বাঁ-পা ধোওয়ার সময় বলবে, হে আল্লাহ! মুশরিক-মুনাফিকদের পা পুলসিরাতে পিছলিয়ে যাবে, সেদিন আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমার পা-কে তুমি দৃঢ় রেখো। এভাবে অজু শেষ করবে। প্রতিটি অঙ্গ তিনবার ধোবে। অজু শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তাঁর কোনো শরিক নেই। হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রসুল। হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র। সব প্রশংসা আপনারই। আপনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই। আপনি তওবা কবুলকারী। আপনি দয়াময়। আমার তওবা কবুল করে নিন। আমাকে নেক বান্দাদের দলে শামিল করে নিন। ধৈর্যশীল ও শোকরগোজার বান্দা হওয়ার তাওফিক আপনি আামাদের দিন। বেশি বেশি জিকির ও তাসবিহ করার তাওফিক দিন। ’

তারপর ইমাম গাজ্জালি বলেন, ‘এভাবে যে কেউই অজু করবে তার পুরো দেহ থেকে গুনাহ ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাবে। তার অজুকে ফেরেশতারা সিল মেরে আকাশে নিয়ে রেখে দেবে। এ অজু কিয়ামত পর্যন্ত বান্দার জন্য দোয়া ও জিকির করতে থাকবে, যার সওয়াব বান্দার আমলনামায় জমা হবে। ’

লেখক : সুপার, নন্দীপাড়া সোনার মদিনা হাফেজিয়া দাখিল মাদ্রাসা, খিলগাঁও ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *