Spread the love

এসভি ডেস্ক: সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার ১১নং দেয়াড়া ইউনিয়নে মোট নয়টি ওয়ার্ডে গত তিন বছর যাবত ১০ টাকা কেজি দরে চাল কিনছেন কার্ডধারী ব্যক্তিরা। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৯ এপ্রিল থেকে প্রায় এক মাস যাবত সরকারের এই চাল বিক্রির কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

এমনকি তাদের ভিজিডি কার্ড বাতিল করে ইউপি চেয়ারম্যান তার নিজস্ব ডিলারদের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করে প্রায় তিনশ মন চাল আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ করছেন সেসব ভুক্তভোগীরা।

তাদের অভিযোগ, গেলো উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলাম লাল্টুর আনারস প্রতীকে ভোট দেওয়ায় অনেকটা তড়িঘড়ি করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ডিলারদের কারসাজিতে তাদের চাল দেওয়া হয়নি। প্রকৃত কার্ডধারীদের চাল না দিয়ে এপ্রিল মাসের চাল ইউপি চেয়ারম্যান ডিলারদের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করে আত্মসাৎ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুরে কার্ড বঞ্চিত শতাধিক ভুক্তভোগীরা উপজেলা পরিষদ চত্বর প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা গণস্বাক্ষরের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউএনও বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে করেন।

ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাসিমা খাতুনসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, ‘ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের তিন শতাধিক কার্ডগুলোর ব্যক্তিরা এতদিন প্রতি মাসে ১০ টাকা কেজি দরের চাল কিনতে পারতেন। তবে গত এপ্রিল মাসে এই চাল উত্তোলন করতে গেলে তাদের কার্ড বাতিল করা হয়। এমনকি এতে হত-দরিদ্রের মোট তিনশ মন চাল আত্মসাৎ করা হয়।’

ভুক্তভোগীরা অভিযোগের সুরে আরও বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে আনারস প্রতীকের ভোট দেওয়ার খেসারতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান কার্ড বাতিল করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ডিলারশিপ বাতিল ও বিষয়টি দ্রুত নিরসনের মাধ্যমে অবিলম্বে প্রকৃত কার্ডধারীদের চাল প্রদান করতে হবে। একই সঙ্গে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

এ সময় ভুক্তভোগীরা নিজেদের কার্ড উঁচু করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা অসহায় আমরাই প্রকৃত কার্ডধারী, আমাদের সঙ্গে ছলনা করা হয়েছে।’

চাল আত্মসাতের বিষয়ে দেয়াড়া ইউনিয়নের ডিলার খোরদো বাজারের আব্দুর রহমান মিঠু কাছে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নতুন করে যে ৫৬০ জনের তালিকা দেওয়া হয়েছে; এবার তাদের চাল দেওয়া হয়েছে। কার্ড সংযোজন-বিয়োজনের ক্ষমতা আমার নেই।’

একই বিষয়ে পশ্চিম খোরদোর মাস্টার ইবাদুল্লাহ নামে আরও এক ডিলার জানান, চেয়ারম্যান ও মেম্বররা নতুন করে যে তালিকা দিয়েছেন সেই ৫৬০ জন কার্ডধারীকে চাল দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান-মেম্বররা আগের কার্ডধারীদের কার্ড বাতিল করায় তাদের আর কোনো চাল দেওয়া হয়নি। তবে কেন এই কার্ড বাতিল করা হয়েছে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মফে বলেন, ‘প্রকল্পটি গত তিন বছর যাবত চলমান; যে কারণে এই সময়ের মধ্যে যাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে তাদের নাম কর্তন করে নতুন করে অসহায় ব্যক্তিদের নামে কার্ড বরাদ্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইউএনও এবং ট্যাগ অফিসারের সম্মতি নিয়েই সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে।’

ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলছিলেন, ‘তিন শতাধিক নয়, এবার একশ’র একটু বেশি নতুন কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। তবে তাদের চাল স্বল্প কিছু বাকি থাকলেও বাকি সকলকে চাল দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আরএম সেলিম শাহ নেওয়াজ জানান- তথ্য সঠিক হলে অবশ্যই আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর অংশ হিসেবে তিনি তাৎক্ষনিক সরকারি খাদ্য গুদামের ইনচার্জ ও খাদ্য কর্মকর্তাদের তলব করেন।মালিকেরা

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা হত দরিদ্র তাদেরকে ঠকানো উচিত না। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব এবং যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের চেষ্টা করব।’