Spread the love

মৌ হাসান, তালা প্রতিনিধি: সুনিপুনভাবেই তৈরী করা হয়েছিল  অতীতের ইতিহাস ঐতিহ্যের নিদর্শন খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। 

কালের বিবর্তনে  কথাতিত ভাবে যেটি ধীরে ধীরে মিয়া মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। অনুমান করা যায়,ষোল’শ শতাব্দীর প্রথমদিকে মোঘল আমলে  তৎকালীন মুসলিম ধার্মিক জমিদার কাজী সালামতুল্লাহ খান বাহাদুর এটি নির্মাণ করেছিলেন।

তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশ থাকাকালীন সময়ে বিহারের এক বাসিন্দা মসজিদটির নকশা ও কারুকাজের জন্য প্রধান মিস্ত্রির দায়িত্বে ছিলেন।মসজিদের গায়ে  লাগানো একটি প্লেটে উল্লেখ রয়েছে, মসজিদটি ১৮৫৮-৫৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা খান বাহাদুর মৌলভী কাজী সালামতউল্লাহ। যেটি মোঘল মনুমেন্টস অব বাংলাদেশ নামক গ্রন্থে প্রকাশিত তথ্য দ্বারা প্রমাণিত।সবচেয়ে আর্শ্চয্যের বিষয় হল,যেটি আজও মানুষকে ভাবিয়ে তোলে। খুব দ্বিধান্নিত হয়ে যায় মানুষ-  মসজিদটি নির্মাণ শেষ হওয়ার পর প্রধান সেই মিস্ত্রীর দুই হাত কেটে নেওয়া হয়।



যেন তিনি নতুনভাবে অন্য কোনো স্থানে এই নকশা বা আকৃতির মসজিদ আর নির্মাণ করতে না পারেন। সত্যিই মসজিদটি অতুলনীয়। খুব কাছ থেকে না দেখলে বোঝায় যায় না। মানুষগুলোর যথাযথ পরিচ্ছন্নতার অভাবে সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। মসজিদটির সাথে সাদৃশ্য করলে কলকাতার ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। এক একর জমির উপর মসজিদটি নির্মিত। মসজিদের উত্তর পার্শ্বে প্রায়  দুই একরের এক বিশাল দিঘি রয়ছে।  দিঘির জল কখনও শুকায় না। দিঘিটিই সত্যিকারের অর্থে মসজিদটির সৌন্দর্য দ্বীগুনেরও বেশি বাড়িয়ে দেয়। বলার মত হয়ত এটিই রয়ে গেছে।

মসজিদটিতে সর্বমোট ৭ টি দরজ রয়েছে।  ১৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ৬ টি বড় গম্বুজ ৮ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ১৪টি মিনার রয়েছে। ২৫ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট চার কোনে ৪টি মিনার। প্রায় দুই শতাব্দীর পুরানো প্রাচীন ঐতিহ্যের স্বাক্ষী এ মসজিদটি পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। 

কথিত আছে,প্রথম দিকে মসজিদের ভিত্তিস্থাপনটি অনেক উচুঁ ছিল। মসজিদের নিচ দিয়ে ঘোড়া দৌঁড়ে চলে যেত। কিন্তুএখনকার সময়ে দেখা গেছে, মসজিদটি মাটিতে বসে গেছে। আগের মত আর নেই।
মসজিদের বাউন্ডারি এলাকায় বহু অজানা ব্যক্তিদের কবরের চিহ্ন থাকলেও সেগুলো অরক্ষিত। মসজিদের বিভিন্ন পার্শ্বের দেওয়ালগুলো সব এখন ফাটল ধরেছে। সংরক্ষণ ও সংস্কার না করা হলে কালের বিবর্তনের মন্হর গতিতে হারিয়ে যাবে।

শুধু ইতিহাসে লেখা হয়ে থেকে যাবে। গর্ব করার মত এটিই দন্ডায়মান হয়ে রয়ে যাবে। এখনও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মানুষের ভীড় জমে যায় মাঝেমধ্যে। ইতিহাস ধরে রাখে মসজিদটি।ধর্মভরু মানুষের প্রার্থনাস্থল এটি। যেখানে প্রবেশের সাথে সাথে মন শীতল হয়ে যায়। সত্যিই অলৌকিকত্ব রয়েছে এখানে।রাতের দৃশ্য আরো বেশি নজর কাড়ে। তারকা খচিত আলোগুলো খুব গম্ভীর কিছুর পথ দেখায়।

মনে হয় অন্য এক পৃথিবী এখানে।সরেজমিন যেয়ে দেখা গেছে, মসজিদের ভিতরে অনেক মুল্যবান প্রয়োজনীয় জিনিস  আছে।মসজিদের দরজা খুব বেশি মজবুত না।তবুও আজ অবধি কোন কিছুর বিন্দু পরিমান অরক্ষিত হয়নি।মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর উজ্জ্বল নিদর্শন ও ইতিহাস “মিয়া মসজিদ”।