Spread the love

শেখ বাদশা, আশাশুনি প্রতিনিধি: আশাশুনিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক বদলীর ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে উপজেলার অপেক্ষাকৃত যোগাযোগে দুর্বল এবং উপরের কর্তাদের সাথে যোগাযোগে ব্যর্থ শিক্ষকরা বদলীর সুযোগ বঞ্চিত হয়ে স্ব-কর্মস্থলে কষ্টের ঘানি টানতে বাধ্য হচ্ছেন।

প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে সোনার হরিণ নামে খ্যাত শিক্ষক বদলীর গোপনীয়, চাতুরতায় ভরপুর ও কোন কোন ক্ষেত্রে অর্থের ব্যবহারের কারবার ঘটার অভিযোগ বেশ জোরে শোরে জেটে উঠেছে। বিশেষ করে মার্চ মাসের পুরো সময়টাই উপজেলা শিক্ষা অফিস বেশ শোরগোলের মধ্যে শিক্ষকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি নির্দেশিকা (সংশোধিত)-এ বলা হয়েছে, উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সুপারিশক্রমে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সহকারী শিক্ষকদের আন্তঃবিদ্যালয় বদলির অনুমোদন প্রদান করে থাকেন। সহকারী শিক্ষক পদে চাকরীর মেয়াদ ন্যুনতম ২বছর পূর্ণ হলে এবং পদশূণ্য থাকলে বদলী করা যাবে।

এছাড়া যে কোন বদলির পর ৩ বছর অতিক্রান্ত না হলে কোন শিক্ষক পুনঃ বদলির জন্য বিবেচিত হবেন না। কিন্তু আশাশুনিতে সে নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খেজুরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেহেনা খাতুনকে ৩ বছর পূর্ণ না হলেও গুনাকরকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। অপরদিকে চাপড়া পূর্বপাড়া সরঃ প্রাথঃ বিদ্যালয় ও বেউলা সরঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ে বদলির খেলায় বেশ চমক দেখান হয়েছে। চাপড়া স্কুলের সহকারী শিক্ষক পিতর বসাককে বেউলা বদলির জন্য সিনিঃ হিসাবে তালিকা নোটিশ বোর্ডে দিয়ে চাপড়া স্কুলে পদ শূন্য দেখিয়ে নোটিশ বোর্ডে তালিকা টানানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আবেদনের সময় শেষ হয়ে গেলেও এবং নোটিশ বোর্ডে বদলি ও পদশূন্য সংক্রান্ত তালিকা লটকানোর পরে সকল নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেউলা স্কুলের জন্য পুনরায় তহমিনা খাতুন নামে এক শিক্ষকের আবেদন নেওয়া হয়।

আরও আশ্চার্যের বিষয় হলো, তহমিনা বা পিতর বসাককে বদলির জন্য নির্বাচিত করা হলেও তদন্তস্থলে বিধান নামে এক শিক্ষককে প্রতিস্থাপনের নোটিশ টানানো হয়েছে। যা শিক্ষকমহলকে হতভম্ব করে দিয়েছে।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, উপজেলা/থানায় কোন পদ শূন্য হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানার অধিবাসী প্রার্থীগণ সেই পদে বদলির জন্য অগ্রাধিকার পাবেন। তবে একাধিক পদ শূন্য থাকলে অন্য উপজেলার শিক্ষকগণও একই ভাবে বদলির জন্য বিবেচিত হতে পারবেন।

এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার তার নিজ অধিক্ষেত্রের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বিদ্যালয় ভিত্তিক শূন্য পদের তথ্যাদি প্রধান শিক্ষকদের ডিসেম্বর-মার্চ মাসে অনুষ্ঠেয় মাসিক সমন্বয় সভায় ঘোষণা করবেন এবং বহুল প্রচারের নিমিত্ত তা উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসের নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শণের ব্যবস্থা করবেন। নিয়ম থাকলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসার নিয়মের তুয়াক্কা না করে, আশাশুনি উপজেলার যোগ্য ও বদলিতে আগ্রহি শিক্ষকদের না জানিয়ে গোপনে ও কিছুটা চাতুরতার মাধ্যমে আবেদনের সময়ের শেষ দিনে পদ শূণ্য দেখিয়ে (আশাশুনির শিক্ষকরা না জানলেও বাইরের উপজেলার শিক্ষকদের জানার ব্যবস্থা করে) ৮টি পদে অন্য উপজেলার শিক্ষক বদলির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

যার মধ্যে দেবহাটা থেকে প্রমিলা সরকারকে সবদালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, শ্যামনগর থেকে মনিরুল ইসলামকে বসাখুলী স্কুলে, শ্যামনগর থেকে শরীফা খাতুনকে কল্যানপুর স্কুলে, তালা থেকে বিথিকা রায়কে উত্তর বড়দল স্কুলে, কয়রা থেকে ফারহানা সুলতানাকে পাইকপাড়া স্কুলে, তালা থেকে রীতারানী কুন্ডুকে বেউলা স্কুলে, দাকোপ থেকে রেহেনা পারভিনকে দঃ চাপড়া স্কুলে ও শ্যামনগর থেকে সাথী রানীকে কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।

আরও আশ্চার্যের বিষয় হলো এসব স্কুলের অধিকাংশতে একই সাথে একাধিক পদ শূণ্য দেখানো হয়নি। বরং একটি গোপনে শেষ মুহুর্তে ও অন্যটি নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে প্রকাশ্যে দেখান হয়েছে। যাতে গোপনে ও শেষ মুহুর্তের শূন্য ঘোষিত পদে স্থানীয়দের আবেদনের সুযোগ না পায়।

এদিকে পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হেনা খাতুনকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সহকারী শিক্ষা অফিসার প্রভাব খাটিয়ে বদলির আবেদনে স্বাক্ষর নিয়ে ওই স্কুলে শূন্যপদ সৃষ্টি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাংবাদিকরা রোববার উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে গেলে তাদের সামনে উপজেলা শিক্ষা কমিটির একজন সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট একজন উপরোক্ত অভিযোগ আনেন। তখন অবস্থা বেগতিক দেখে শিক্ষা অফিসার হেনা খাতুনকে বদলি হতে চান না এমন আবেদন করতে পরামর্শ প্রদান করেন। কিন্তু কেন তার থেকে এমনটি করা হলো সে ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোসাঃ শামছুন্নাহার বলেন, রেহেনার বিষয়টি কিভাবে হয়েছে বুঝতে পারছি না। তবে বেউলা ও চাপড়ার বিষয়টি নিয়ে এলোমেলো ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেন। অন্য উপজেলা থেকে আগতদের ব্যাপারে আশাশুনির শিক্ষকরা জানতে পারলো না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি শেষ মুহুর্তে নোটিশ বোর্ডে ঝুলানো হয়েছিল, কেবল একজন করে আবেদন করায় তাদেরকে বদলির তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক ও স্থানীয় সচেতন মহলের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।