তালা প্রতিনিধি: তালায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঘাস চাষে সফলতার হাসি হাসছেন কৃষকরা। অল্প সময়ে সল্প জমিতে ঘাস চাষ লাভজনক হওয়ায় এ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকরা।
জানাযায়, তালা উপজেলা দুধপল্লী হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে অনেক আগেই । সেই দুগ্ধবতী গাভীর জন্য সবুজ ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। গাভীকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে সবুজ ঘাস দিলে প্রচুর দুধ উৎপন্ন হয়। আগে আমাদের দেশে চারণ ভূমিতে গরুকে খাওয়ানো হত কিন্তু বর্তমানে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চারণ ভূমির পরিমান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। তাই কৃষকেরা অল্প জমিতে উন্নত জাতের ঘাস চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের ঘাস চাষ হয়। তারমধ্যে নেপিয়ার, পারা, জাম্বু, জার্মান ও পাপচন ঘাস অন্যতম।
এসব জাতের মধ্যে বাংলাদেশে নেপিয়ার ঘাস খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় নেপিয়ার ঘাস খুব ভালো হয়। কচি অবস্থায় পুষ্টিমান বেশি থাকে। গবাদি প্রাণীর জন্য নেপিয়ার অত্যন্ত উপাদেয় ও পুষ্টিকর খাদ্য। কারণ এ ঘাসটি অল্প সময়েই বৃদ্ধি পায় এবং চার বৎসর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
উপজেলায় জনবসতি বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে গরু -ছাগল চরনোর জায়গা প্রায় নেই বললে চলে ।তাই গরু-ছাগলে দৈহিক যোগান দিতে উপজেলার তেঁতুলিয়া জিয়ালা, জাতপুর, নলতা গ্রামে প্রচুর পরিমানে ঘাস চাষ করছেন কৃষকরা ।
চারনভূমি না থাকায় কৃষক অভাবের তাড়নায় অনেক গরু-মহিষ কম দামে বিক্রি করে দেন। অনেকের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া খাদ্যাভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। তাই বাংলাদেশে এরকম লক্ষ লক্ষ একর পতিত জমি সারা বছরই খালি পড়ে থাকে। একটু সচেতন হলেই আমরা এই জমি কাজে লাগিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করতে পারি।
উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের ১০ বছরের ঘাস চাষী ফারুক মোড়লের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘাস চাষ খুবই লাভজনক। প্রথম অবস্থায় মাত্র ১৫ শতাংশ জমি প্রস্তুত করে নেপিয়া জাতের ঘাস চাষ শুরু করে। একবার মূল রোপনের পর ৪ বছর একটানা ঘাস বিক্রি করা যায়। প্রথম অবস্থায় তার বাড়িতে ১টি গাভী ও ৩টি ছাগলের বাৎসরিক খোরাক মিটিয়ে ১ লক্ষ ৪ হাজার টাকার ঘাস বিক্রি করেন। খরচ হয় মাত্র ৭ হাজার টাকা।
তার দেখাদেখি তার বাড়ির পাশের প্রতিবেশীরা মাঠের পর মাঠ ঘাস চাষ করেছেন।
তবে একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ঘাস চাষ খুবই লাভজনক। কৃষকরা নিজ নিজ উদ্যোগে প্রতি বছর নতুন নতুন ক্ষেত চাষের জন্য প্রস্তুত করলেও উপজেলা কৃষি অফিস এমনকি মাঠ পর্যায়ের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাদের সরকারী সুযোগ সুবিধা তো দূরের কথা, ডাকলেও পরামর্শ দেয়ার সময় তাদের।
একাধিক কৃষকরা জানিয়েছেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষের সফলতার চাবিকাটি গৃহপালিত পশুপালন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গরু মোটাতাজাকরণ ও দুগ্ধ জাতের গাভী পালন। এমনকি ছাগল পালনও লাভজনক। পরিবারের কর্তার পরিশ্রমের একটি অংশ দৈনন্দিন গৃহপালিত পশুর জন্য ব্যয় করে গৃহিনীদের পরিশ্রমে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকার সফলতার পথ খুঁজে পেয়েছেন কৃষকরা।
ঘাস চাষী কৃষকদের দাবী কৃষি বিভাগ উন্নত প্রযুক্তি ও চাষের উপরে বিভিন্ন ব্যবহারিক সেমিনার, পরামর্শ দিলে গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক মুক্তির মূলমন্ত্র হবে ঘাস চাষের সাথে পশুপালন।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তাদের নয়। প্রাণী সম্পদ অফিসের।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ দাশ কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জেলা প্রাণী সম্পদের উদ্যোগেই ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে কৃষকরা।