Spread the love

এসভি ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতের ভোটের সংস্কৃতি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বের হতে পারেনি। আজ ডাকসু নির্বাচনকেও কলঙ্কিত করা হলো।’

সোমবার (১১ মার্চ) সকাল সোয়া ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় একটি ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান। আমাদের ভাষা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্রসহ সকল অধিকারের আন্দোলনে ডাকসু’র (ঢাক বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) ভূমিকা ছিল অগ্রগামী। আজ সেই ডাকসুর নির্বাচন। দেশে বিদ্যমান নাৎসিবাদী পরিকাঠামোর মধ্যেই ২৮ বছর পর নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যরাতের ভোটের স্মৃতি ডাকসু নির্বাচনেও সাধারণ ছাত্রদেরকে তাড়িত করছে। এ নির্বাচনে সাধারণ ছাত্রদের অনেক ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। নাৎসিবাদী গণতন্ত্রের নানারূপ এ ডাকসু নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রতিফলিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাবির ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ভোট কেন্দ্র করা হয়েছে ১৮টি হলে। সব সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একাডেমিক ভবনে ভোট কেন্দ্র দাবি করেছিলেন। এছাড়াও ভোটের সময় বাড়ানো, স্টিলের ব্যালট বাক্সের বদলে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, রাতের ভোটের আতঙ্কে রাতে যেন ব্যালট বাক্স না নেয়া হয় সে দাবিও প্রার্থীরা করেছিলেন। কিন্তু এসব দাবি নাকচ করা হয়েছে। 

রিজভী বলেন, ‘১৮টি কেন্দ্রের জন্য টেলিভিশন মাধ্যমের ৪টি ইউনিট ও প্রিন্ট মিডিয়ার ২ জনকে ঢুকতে দেয়া হবে। অর্থাৎ সংবাদ সংগ্রহে কড়াকড়ি বিধি নিষেধ, তথ্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। ডিজিটাল বাংলাদেশের উল্লাসে অস্থির ক্ষমতাসীনদের রাজত্বে এখন কি দশা হলো যে মোবাইল ফোনসহ সব ধরণের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ আজ নির্বাচনের দিন সব ধরনের অনিয়মের প্রমাণ না রাখা।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৫ জন। যা ডাকসুর ইতিহাসে নজিরবিহীন। ছাত্রলীগের ভয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন এ রকম বেশ কিছু প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিরোধী মতের শিক্ষকদের ডাকসু নির্বাচনের কোন দায়িত্বে রাখা হয়নি। গত কয়েক দিনের সাধারণ ছাত্রদের জোর করে ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে সাধারণ ছাত্রদের হুমকি দিয়ে হলগুলো পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। মানুষের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ডাকসু নির্বাচন সরকারেরই নীতি ও নীলনকশা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হচ্ছে কি না। এখনও পর্যন্ত বিশ্বদ্যিালয়ের কর্তৃপক্ষের যাবতীয় আয়োজন ছাত্রলীগকে অবৈধপন্থায় বিজয়ী করার অনুকূলে। ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতের ভোটের সংস্কৃতি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বের হতে পারেনি। আজ ডাকসু নির্বাচনকেও কলঙ্কিত করা হলো।’ 

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘গত রাতেই ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছে, যার প্রমাণ পাওয়া গেল আজ কুয়েত-মৈত্রী হলে বস্তাভর্তি সিল মারা ব্যালট। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীসহ বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সমর্থকরা যাতে ভোট দিতে না পারে সেজন্য পুলিশ অবিশ্বাস্য রকমের তৎপরতা শুরু করেছে। সব হলে ছাত্রলীগের আতঙ্কজনকহারে মহড়া চলছে। এ নির্বাচনের পরিণতি নিয়ে জনমনে সংশয় গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে।’

তথ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী বলেছেন-‘খালেদাকে সানগ্লাস পড়া দেখলে মনে হয় না তিনি অসুস্থ’,এ বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই। আমি তাদের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজেদা চৌধুরীর প্রজ্ঞা ও জাজমেন্টের প্রশংসা করি এজন্য যে, তিনি তার দলেরই একজন নেতা ও মন্ত্রী সম্পর্কে বলেছিলেন বিশ্বের সেরা বেয়াদব। এমন কোন কি ব্যক্তি আছেন যাদের চোখে অপারেশন হওয়ার পর সানগ্লাস পড়েন না। চোখের ক্ষত না সারা পর্যন্ত রোদ, ধূলা ও পানি থেকে চোখকে নিরাপদ রাখার জন্যইতো সানগ্লাস ব্যবহার করে। রাজনৈতিক ব্যক্তি যখন ব্যক্তিত্বহীন হয়ে পড়েন, বেআইনি পন্থায় দখলকৃত ক্ষমতার অংশীদার হতে প্রধান নেতার মুসাহেবি করার কুৎসিত প্রতিযোগিতায় নেমে দেশের বিরোধী রাজনীতির সম্মানিত নেতাদের সম্পর্কে অভদ্র ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিতেও কার্পণ্য করে না। এই সব ব্যক্তি যতই ক্ষমতাশালী মন্ত্রী হোক না কেন তাদের সাংস্কৃতিক মান অত্যন্ত নিচুমানের। তারা সুরুচিপূর্ণ ও সুসংস্কৃত পরিবেশে গড়ে উঠেননি।’

রিজভী আরও বলেন,‘তথ্যমন্ত্রীর কথাবার্তা শুনলে মনে হয় মন্ত্রীত্ব রক্ষার গ্যারান্টির জন্যই আগের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর চেয়ে এক ধাপ উপরে থাকতে চাচ্ছেন। সেজন্যই জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে দিন-রাত অশ্রাব্য অশোভন মন্তব্য করতে দ্বিধা করছেন না। কারণ জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অশোভন বক্তব্য বিবৃতির প্রতিযোগিতায় যে চ্যাম্পিয়ন হয় তাকেই সরকার প্রধান ক্ষমতার ভাগ দিতে মন্ত্রী সভায় রাখেন।’

তিনি বলেন, ‘দেশে সহিষ্ণুতার পরিবেশকে কালিমালিপ্ত করে বিদ্বেষ ও বিভাজন ছড়াচ্ছেন আওয়ামী নেতারা। বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে মস্করা করতেই মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বাংলাদেশ নামক দেশটি আদিম শিকারিদের মতো চালিত হচ্ছে। বিরোধী দলকে বেয়নেট, কার্তুজ,লাঠি পেটা, বোমাগুলি বারুদের দমবন্ধ করা ধোঁয়ার কুন্ডলির মধ্যে ঢেকে রাখার সকল পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘দেশনেত্রীর প্রতি সরকার প্রধানের বিদ্বেষপোষণের কারণেই সরকার তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ দিচ্ছে না। বার বার পরিবারের ও দলের পক্ষ থেকে কারা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরও তাদের নির্দয় মনোবৃত্তির কোন পরিবর্তন হয়নি। তারা জোর করে তাকে বিএসএমএমইউতে (পিজি) পাঠাতে চায়। পিজিতে কয়েকমাস আগে বেগম খালেদা জিয়াকে ভর্তি করার পর তাকে চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার রোগ নির্ণয়ের জন্য তেমন কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। যাও দু একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল তাও আবার জুনিয়র ও অদক্ষ টেকনিশিয়ার দ্বারা করানো হয়েছে। তাকে চিকিৎসা দিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত মানা হয়নি।’