এসভি ডেস্ক: কেউ শত্রুকে ক্ষমা করতে চায় না। সুযোগ পেলে এক হাত দেখে নেয়ার চেষ্টা করে। সবসময় প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। প্রত্যেক পেশায় ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অবস্থানের ধরন অনুযায়ী কম-বেশি প্রতিপক্ষ কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে। সহজে ভাষায় প্রতিপক্ষ কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে শত্রু মনে করা হয়। রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাজারে ও অফিস-আদালতে শত্রু সম্পর্কে সকলকে সতর্ক থাকতে হয়। কারণ শত্রু দ্বারা যে কোনো সময় শারীরিক মানসিক ও আর্থিক ক্ষতি সংঘটিত হতে পারে। শত্রুর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার লক্ষ্যে মানুষ কোর্ট-কাচারি, চেয়ারম্যান-মেম্বার, ফকির-দরবেশ ও কবিরাজের নিকট দৌড়াদৌড়ি করে। কুরআনে শত্রুর শত্রুতা হ্রাস করার জন্যে ভালো আচরণের তাগিদ প্রদান করা হয়েছে।
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেহ যদি তোমার সহিত অন্যায় ব্যবহার করে তুমি সদ্ব্যবহার দ্বারা তাহার প্রতিশোধ লও, তাহা হইলে যাহার সহিত তোমার শত্রুতা আছে সে তোমার পরম বন্ধু হইবে’। (সূরা মুমিনূন : ৯৬)।
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে মার্জনা করে ও সংশোধিত হয় তবে আল্লাহর উপরই তাহার প্রতিদান রয়েছে’। (সূরা শুরা : ৪০)। আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘তাহাদের প্রতি আশীর্বাদ কর, নিশ্চয় তোমার আশীর্বাদ তাহাদের জন্য শান্তিপ্রদ’। (সূরা তাওবা : ১০৩)। ‘তোমরা সৎ কার্যের দ্বারা অসদ্বিষয় দূরীভূত কর। (সূরা মুমিনূন : ৯৬)।
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে দোষারোপ করিও না, কাহারও দোষ অন্বেষণ করিও না। তোমরা গুপ্তচর হইও না এবং একজনের অনুপস্থিতিতে অন্যজন দুর্নাম করিও না’। (সূরা হুজরাত : ১১-১২)।
শত্রুর সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাসূল(সা.) আমাদের আদর্শ। তার বিশ্বাসের কারণে তিনি প্রচন্ড প্রতিকূলতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এমনকি তার শত্রুরা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলো এবং তাকে খুন করার চেষ্টাও করে ছিলো, কিন্তু আল্লাহর রাসূল তাদের শত্রুতার জবাব দিয়েছিলেন দয়া ও সৌন্দর্যের সাথে।
সর্বদাই তিনি তার শত্রুদের জন্য প্রার্থনা করতেন। তিনি কামনা করতেন, যেনো তারাও আল্লাহর হেদায়েত অর্জন করতে পারে। তারা ক্ষতিগ্রস্থ বা অভিযুক্ত হোক এটি তিনি কখনোই চাইতেন না। তার লক্ষ্য ছিলো ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতেই ইসলামের মাধ্যমে সকল মানুষের কল্যাণ সাধনের।
একবার রাসূল (সা.) এর সাহাবারা তার শত্রুদের দ্বারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে তারা রাসূল(সা.) এর কাছে আবেদন জানান, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মুশরিকদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ কিন্তু রাসূল(সা.) উত্তর দিলেন, ‘আমি অভিশাপ দেওয়ার জন্য আসিনি, বরং আমি এসেছি ক্ষমা প্রার্থনার জন্য।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৯৯)
অপর একসময় সাহাবারা রাসূল (সা.) এর বিরোধিতাকারী দাউস নামের এক গোত্রের ধ্বংস কামনা করে বলছিলেন, ‘আল্লাহ যেনো দাউস গোত্রকে ধ্বংস করে ছাড়েন।’ কিন্তু আল্লাহর রাসূল(সা.) দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! দাউস গোত্রকে হেদায়েতের পথ দেখাও এবং আমার নিকটে নিয়ে আসো।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪১৩১)
‘হে আমার মালিক! আমার লোকদের ক্ষমা কর। তারা জানেনা যে, তারা কী করছে।’ (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৯৮৫)
বদর যুদ্ধের একজন বন্দী আবু আজিজ ইবনে উমায়ের থেকে জানা যায়, তিনি যখন বদর যুদ্ধে বন্দী হয়ে এসেছিলেন, তখন মদীনার নাগরিকরা নিজেরা না খেয়ে তাদের জন্য রুটির ব্যবস্থা করেছিলেন। এই আচরণই তাকে উদ্বুদ্ধ করে ইসলাম গ্রহণে। (মু’যাম আল কবীর)
প্রকৃতপক্ষে ইসলামের ইতিহাস হচ্ছে দয়া, ক্ষমা এবং পরিত্রাণ প্রদানের। রাসূল(সা.) দীর্ঘ তেরো বছর মক্কায় শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামের প্রচার করেছিলেন। তিনি তখনই মদীনায় হিজরত করেন যখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ প্রতিকূলে চলে গিয়েছিলো। এরপর ক্রমাগত দশ বছর মদীনায় মুসলমানরা মক্কার আক্রমণ প্রতিহত করে একতা ও বিশ্বাসের বলে ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। মক্কা বিজয়ের পর রাসূল (সা.) তার সেই শত্রুদের উপর ক্ষমতার অধিকারী হন, যারা দীর্ঘ তেইশ বছর বিভিন্নভাবে তাকে কষ্ট দিয়েছে, এমনকি তার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে। রাসূল(সা.) ইচ্ছা করলে এইসময় তার সকল প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে সকলের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। (তারিখ দিমাশক)
মক্কা বিজয়ের দিন কোনো প্রকার প্রতিশোধ না নিয়েই রাসূল(সা.) তার শত্রুদের মুক্ত করে দিয়েছিলেন। এটিই শত্রুর সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান। ধৈর্য্য, ক্ষমা এবং দয়ার মধ্য দিয়েই শত্রুকে আমাদের কাছে নিয়ে আসতে হবে।