Spread the love

এসভি ডেস্ক: আজ থেকে ১০ বছর আগে এই দিনে (২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা হয়। এর একটি বিচারিক আদালতের রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হয়েছে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর। যদিও রায় ঘোষণার এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়নি।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামি পক্ষের আপিলের রায় হলেও বিচারপ্রার্থীরা পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করছেন।

এ বিষয়ে আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, পিলখানা হত্যার ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা হয়েছিল। পরে সরকার গ্রেজেট দিয়ে বিশেষ আদালত করে। এই বিশেষ আদালতে হত্যা মামলা এবং বিস্ফোর আইনে করা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ২০১৩ সালে রায় ঘোষণা করা হয়। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল করার পর হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ের পূর্নাঙ্গ অনুলিপি (ফুল টেক্স) প্রকাশের অপেক্ষায়। রায় প্রকাশ পাওয়ার পর সাজাপ্রাপ্তদের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল আবেদন করা হবে। এছাড়া হত্যা মামলার অনেক আসামি আছেন যাদের স্বল্প মেয়াদে সাজা হয়েছিল। তাদের সাজা খাটা শেষ হলেও রিলিজ হচ্ছে না। খালাসপ্রাপ্তদেরও মুক্তি মিলছে না।

তিনি আরও বলেন, হত্যা মামলায় ২০১৭ সালে হাইকোর্টের রায় ঘোষণা করা হলেও বিস্ফোরক আইনে ১২শ’র বেশি সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৭৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হোক।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, দেশের ইতিহাসে সবচাইতে বেশি সংখ্যক আসামির মামলা এটি (বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় মামলা)। আপিলের রায় লিখতে বেশি সময় লাগবে এটাই স্বাভাবিক।

তবে কবে নাগাদ এই আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হতে পারে তা বলেননি অ্যাটর্নি জেনারেল।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দফতরে রক্তাক্ত বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ওই ঘটনার পর ৫৭টি বিদ্রোহের মামলার বিচার হয় বাহিনীর নিজস্ব আদালতে। আর হত্যাকাণ্ডের বিচার চলে বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত মহানগর দায়রা জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে।

ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ হত্যা মামলার যে রায় ঘোষণা করেন, তাতে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

মামলার সাড়ে ৮০০ আসামির মধ্যে ওই রায়ের দিন পর্যন্ত জীবিত ছিলেন ৮৪৬ জন। তাদের মধ্যে ১৬১ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

পাশাপাশি অস্ত্র লুটের দায়ে তাদের আরো ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জারিমানা, অনাদায়ে আরো দুই বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক।

এছাড়া ২৫৬ আসামিকে তিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়। কারো কারো সাজার আদেশ হয় একাধিক ধারায়।

অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় রায়ে ২৭৭ জনকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত।

মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতরা সবাই বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্য ছিলেন। যাবজ্জীন কারাদণ্ডে দণ্ডিতদের মধ্যে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীও রয়েছেন। এর মধ্যে নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ২০১৫ সালের ৩ মে রাজশাহী কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

ওই রায়ের এক বছরেরও বেশি সময় পর ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে আসে। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল ও জেল আপিল করে আসামিপক্ষ। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষও খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে ও সাজা বাড়াতে আপিল করে।