Spread the love

এসভি ডেস্ক: শুরু হলো বাঙালি জাতির অধিকার আদায় ও ভাষা রক্ষার মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালে ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে মায়ের মুখের ভাষা রক্ষার দাবিতে উত্তাল ছিলো ঢাকার রাজপথ।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত করে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভারত ও পাকিস্তান।  দুটি পৃথক অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান। পূর্ব বাংলা আজ বাংলাদেশ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক বছর পরই ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি করাচিতে গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে বিরোধী দল দুটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করে। প্রথম প্রস্তাবটিতে বছরে অন্তত একবার ঢাকায় পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়। দ্বিতীয় প্রস্তাবটি ছিল ভাষা সংক্রান্ত। দ্বিতীয় সংশোধনীটি ছিল খসড়া নিয়ন্ত্রণ প্রণালির ২৯ নাম্বার ধারা সম্পর্কে। এই ধারায় বলা হয়েছিল- পরিষদের প্রত্যেক সদস্যকে উর্দু বা ইংরেজিতে বক্তৃতা করতে হবে। প্রস্তাবটির উপস্থাপক পূর্ববাংলার কংগ্রেস দলের প্রতিনিধি শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকেও পরিষদের সরকারি ভাষা করার প্রস্তাব করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি এই প্রস্তাব সম্পর্কে আলোচনা হয়। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, পূর্ববাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন ও গণপরিষদের সহ-সভাপতি মৌলভী তমিজুদ্দীন খানের তীব্র ভাষায় বিতর্কের পর বাংলা ভাষা গণপরিষদের অন্যতম ভাষার দাবির প্রস্তাব অগ্রাহ্য হয়।’তাদের এ অগ্রাহ্য বেশি দিন টিকে নি। তার প্রমাণ পেতে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি-পরবর্তী ঘটনাবলী তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।

১৯৫২ সালে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্টি বাঙালির মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে উর্দুকে ভাষাকে বাঙালি জাতির ওপর  চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলো। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মায়ের ভাষা বাংলার সম্মান ও অধিকার রক্ষায়  নিজেদের জীবন দিয়েছেন রফিক, সালাম, বরকত আর শফিকসহ বাঙলার দামাল ছেলেরা।  যার স্পর্শে বাঙালির চেতনা শানিত ও বিকশিত হয়ে জাতি আজ স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার লক্ষ্যে যারা শহীদ হয় তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের জন্য শহীদ দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর  জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো) ৩০তম অধিবেশন ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার করে। যার ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা লাভ করে বিশেষ মর্যাদা। ঠিক পরের বছর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়।

ভাষা আন্দোলনের চেতনাঋদ্ধ প্রতিষ্ঠান হচ্চে বাংলা একাডেমি। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে বই মেলার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। বই মেলাকে “অমর একুশে গ্রন্থমেলা”ও বলা হয়।

বই মেলার ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়,  ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে চিত্তরঞ্জন সাহা নামে এক ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি একাই বইমেলা চালিয়ে যান। ১৯৭৬ সালে অন্যান্যরা অণুপ্রাণিত হোন। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমীকে মেলার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ সালে মেলার সাথে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি; এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম “অমর একুশে গ্রন্থমেলা”র আয়োজন সম্পন্ন করেন। বেশ কয়েক বছর পূর্বে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্রন্থমেলা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হতো। এরপর ক্রেতা, দর্শক ও বিক্রেতাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিন পর‌্যন্ত এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।