এসভি ডেস্ক: ইসলামে আল্লাহপাক বাবা-মায়ের মর্যাদা অনেক ওপরে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক তার নিজের অধিকারের পরই পিতা-মাতার অধিকারের কথা উল্লেখ করেছেন।
কোরআন কারিমে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। (সুরা বনি ইসরাইল :২৩)। ইমাম কুরতুবি (রা.) বলেন, এ আয়াতে আল্লাহপাক পিতা-মাতার সম্মান ও তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করাকে নিজের ইবাদতের সঙ্গে বর্ণনা করে সন্তানের ওপর তা অপরিহার্য করেছেন।
আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা যেমন অতি জরুরি, অনুরূপভাবে পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় করাও সন্তানের জন্য জরুরি (তাফসিরে কুরতুগি ৫/৫৭৫)। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে বণির্ত হয়েছে, কোনো এক ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সময়মতো নামাজ পড়ো। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, এর পর কোন কাজটি সর্বাধিক প্রিয়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন এর পর কোন কাজটি সর্বাধিক প্রিয়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করো (সহি বুখারি :১/৭৬)।
হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, সন্তানের ওপর পিতা-মাতার দায়িত্ব কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তারা উভয়েই তোমাদের জান্নাত এবং জাহান্নাম (ইবনে মাজাহ, পৃ.-২৬০)।
ইসলামের দৃষ্টিতে পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়া কোনোভাবেই বৈধ নয়। সন্তান যদি একনিষ্ঠতার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করার পাশাপাশি পিতা-মাতার সেবাযত্ন, খেদমত এবং উত্তম আচরণ করে; তবে সে দুনিয়া ও পরকালে মহাসফলতা লাভ করবে। আর যদি পিতা-মাতার সঙ্গে অসদাচরণ করে অথবা সন্তানের কোনো কাজের কারণে পিতা-মাতা অসন্তুষ্ট হন, তবে তার জন্য জাহান্নাম সুনিশ্চিত।
আল্লাহপাক তাঁর ইবাদাতের সঙ্গে সঙ্গে পিতামাতার প্রতি উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাকে (আল্লাহ) ছাড়া অন্য কারও ইবাদাত কর না এবং পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কোনো একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বল না এবং ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বল।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩)
এ কারণেই হাদিসে এসেছে, হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলে আরাবিকে জিজ্ঞাসা করলেন, সন্তানের ওপর পিতা-মাতার হক কী? উত্তরে বিশ্বনবি বললেন, তাঁরা উভয়েই তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। অর্থাৎ যারা পিতামাতার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে, তারা সফলকাম। আর যারা তাদের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে তাদের জন্য লাঞ্ছনা।
হাদিসে আরো এসেছে- যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পিতা-মাতার আনুগত্য করে তার জন্য জান্নাতের দুটি দরজা খোলা থাকবে; আর যে ব্যক্তি তাদের অবাধ্য হয় তার জন্য জাহান্নামের দুটি দরজা খোলা থাকবে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি বিশ্বনবিকে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাহান্নামের এ শাস্তির বাণী কি তখনো বলবৎ থাকবে? পিতা-মাতা যখন এ ব্যক্তির প্রতি জুলুম করে। উত্তরে রাসুলে আরাবি বলেন, এই শাস্তির বিধান হয়তো তখনো প্রযোজ্য হবে।