এসভি ডেস্ক: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত নয়, বিএনপি মনোনীতরাই প্রার্থী হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, বলেন, ‘তারা (জামায়াতের প্রার্থী) শুধু ধানের শীষ প্রতীকেই নয়, তারা বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করছেন তারা। বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ তাদের দেয়া হয়েছে। জামায়াত তাদের মনোনীত করেনি। বিএনপি মনোনীত করেছে।’
শনিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর এক চিঠি প্রদান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
আদালত কর্তৃক সাময়িক স্থগিত হওয়া বিএনপির প্রার্থীদের আসনে নির্বাচন স্থগিত অথবা প্রার্থিতা পরিবর্তনের সুযোগ চেয়ে সিইসির কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেন নজরুল ইসলাম।
এসময় বিএনপি চেয়ারপারনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালি, বিজন কান্তি সরকার ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল উপস্থিত ছিলেন।
পরে নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের
বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া জামায়াতের নেতাদের পদপদবি তাদের দলীয় ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওয়েবসাইটে পদ পদবি থাকুক। আপনারাও যদি আমাদের কাছে মনোনয়ন চান, আমরা দিতে পারি। কোনও ওয়েবসাইটে আপনার নাম কীভাবে আছে সেটা পরের ব্যাপার। আমরা আইনের মাধ্যমে দিতে পারি কিনা সেটা হল বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াত কোনও নিবন্ধিত দল নয়। কারা কারা জামায়াত করে সেই তালিকাও আমাদের কাছে নাই। আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছি, তারা আমাদের দলের প্রতীক ধানের শীষ পেয়েছে। এটা যদি অবৈধ হত তাহলে নির্বাচন কমিশন আগেই বলত- তাদের প্রার্থিতা অবৈধ। তাদের যদি প্রতীক দেয়া বেআইনি হতো, যখন প্রতীক বরাদ্দ করা হয় তখন নির্বাচন কমিশন কেন প্রতীক বরাদ্দ করল?’
ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় বলে নির্বাচন কমিশন যা করে তাই আমরা মেনে নেব, বাধা সৃষ্টি করব না। এখন কেন আওয়ামী লীগ ইসির কাজে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করছে?’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আদালত ১২/১৪ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব আসনের নির্বাচন স্থগিত রেখে আবার নির্বাচনের দাবি করছি। অথবা এসব আসনে আমাদের প্রার্থী পরিবর্তনের সুযোগ দেয়া হোক। নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতা বৈধতা দেয়ার কারণেই তাদেরকে আমরা মনোনীত করেছি। কমিশন যদি সেইসময় অবৈধ ঘোষণা করতো তবে আমরা অন্য প্রার্থী দিতাম।’
সারাদেশে দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি, হামলা, ধড়পাকড়, মামলা অব্যাহত রয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একদিকে পরিকল্পিতভাবে আদালক কর্তৃক প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করা হচ্ছে, অন্যদিকে বৈধ প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বরিশাল-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী শিরিন আক্তার তাকে গতকাল মারধর করে পা ভেঙে দেয়া হয়েছে। বরিশাল হাসপাতলে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শনিবার পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। সেখানে তাকে দেখতে যাওয়া ৮/১০ নেতাকর্মীদের পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে। এছাড়া নরসিংদীর মনোহরদির আসনের বিএনপি প্রার্থী সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল নির্বাচন প্রচারনার আজ দুপুরে আওয়ামী লীগে লোকজনের হামলায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পুলিশি উপস্থিতে সেখাতে হামলা হলেও হামলাকারীদের গ্রেফতার না করে বরং বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। নরসিংদীর-৩ আসনের মনজুর এলাহীর মিছিলেও আওয়ামী লীগ হামলা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনা নির্বাচন করার আগে চাকরি ছেড়ে দিলেও তার মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু একই নির্বাচনী এলাকায় একজন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা-১৭ এর গুলশান এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী অভিনেতা ফারুক (আকরব হোসেন পাঠান) ঋণ খেলাপি হলেও তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়নি।’
গণতন্ত্র আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত অধিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের বাহন হল নির্বাচন। সেই নির্বাচন যদি এভাবে প্রহসনে পরিণত হয়, হাস্যকর করা হয়। তাহলে এর দায়দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সময়ে ইসি অসীম ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু তারা কেন সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করছে না, নিশ্চয় জনগণ সেটা জানতে চাইবে। আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করছি আমাদেরকে নির্বাচনি প্রচারনা চালাতে দেয়া হোক। কারণ এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।’
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সরকার তাদের দেশে আসতে বাধা দিচ্ছে। তাদের ভিসা না দিলে তারা কীভাবে আসবেন। কারণ সরকার নির্বাচনের নামে যে কাজটি করতে চাচ্ছে সেটি হল চুরিচামারি। যে কাজে বাধা হতে পারে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। এ কারণেই সরকার বিদেশি পর্যবেক্ষক আসতে দিতে চাচ্ছে না।’