Spread the love

এসভি ডেস্ক: আবারও দেশবাসীকে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই বিজয়ের মাসে স্বাধীন দেশের জনগণের কাছে আরও একবার নৌকা মার্কায় ভোট চাই। নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহক রাখুন। যেন কেউ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে।’

সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের গত ১০ বছরের উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরেন। 

ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে, তারা সরকার গঠন করলে সরকারের প্রধান কে হবেন সেটা আজ পর্যন্ত জনগণ জানে না। তারাও বলতে পারে না। তবে কি ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার জন্য সাজাপ্রাপ্ত যে সে দলের প্রধান হবে, নাকি আইভি রহমানের হত্যাকারী গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত জন হবে, না ওই একাত্তরের পরাজিত শক্তির কেউ হবে? দেশের জনগণের ওপর এই ভার ছেড়ে দিলাম আমি।’ 

নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আরও একবার নৌকা মার্কায় ভোট চাই। দেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন। আশা করি দেশের জনগণ আমাদের নিরাশ করবেন না।’

আওয়ামী লীগের উন্নয়নের প্রসঙ্গে টেনে তিনি আরও বলেন, ‘গত ১০ বছরে আমরা যে পরিবর্তনটা এনেছি, সেই পরিবর্তনটা অনেকের চোখে পড়ে না। যখন মানুষ ভালো থাকে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, তখন তারা বলে এটা নাকি স্বেচ্ছাচারিতা। স্বেচ্ছাচারিতা কী করে হল- এটা আমার প্রশ্ন। কী দেখতে পেল তারা?’

ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেখলাম, তারা ঘোষণা করেছে- স্বেচ্ছাচারিতাকে নাকি পরিবর্তন করবে। এ পরিবর্তন কি জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলা ভাই সৃষ্টি, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, আবার সন্ত্রাস, আবার ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা, আবার নির্বাচনের নামে প্রহসন, দেশের সমস্ত উন্নয়ন ধ্বংস করে দিয়ে দেশকে সম্পূর্ণভাবে আবার অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া? এই পরিবর্তন তারা আনতে চান?’ 

তিনি বলেন, ‘অতীতে তারা ছিল তো ক্ষমতায়। ৪৭ বছর তো হলো দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই ৪৭ বছরের মধ্যে ৩৯ বছর তো এরা ক্ষমতায় ছিল। কী দিয়েছিল মানুষকে? কী পেয়েছে মানুষ?’

এসময় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার তাদের জন্য করুণা হয়, কারণ তারা দিকভ্রষ্ট। তাদের আর কোনো নীতি নাই। নীতিভ্রষ্ট, আদর্শহীনরা কখনও মানুষকে কিছু দিতে পারে নাই এবং দিতেও পারবে না। আমি বলব এরা বাংলাদেশের আদর্শে বিশ্বাস করে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৌকা মার্কা জনগণের মার্কা। এই নৌকা মার্কা দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা এসেছে। এই নৌকা মার্কা দিয়েই বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি। এই নৌকার মার্কার ফলে বাংলাদেশ উন্নয়নের গতিতে এগিয়ে বিশ্বে আজকে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। এই নৌকা মার্কা আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘এই নৌকা মার্কা ছিল বলেই আজকে আমরা মহাকাশ জয় করেছি পাশাপাশি বিশাল সমুদ্র সীমা অর্জন করেছি। আমাদের ল্যান্ড বাউন্ডারি অর্জন করেছি। আজ বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে নেমে এসেছে। ইনশাল্লাহ, আগামী ৫ বছর যদি আবার আমরা নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারি এই দারিদ্র্যের হার অন্তত আরও ৫/৬ ভাগ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো।’

বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে  আমরা  বিজয় অর্জন করেছি।১৯৭৫ এর পর সেই স্বর্ণালী ইতিহাস মুছে ফেলে নতুন প্রজন্মকে মিথ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে তৎকালীন অপশক্তি পরিচালিত সরকার। স্বাধীনতার সুফল একে একে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল তারা। স্বাধীনতাবিরোধী, খুনি, রাজাকার, আলবদও, আল-শামস বাহিনী, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, দুর্নীতিবাজ, অস্ত্র চোরাকারবারি, সাজাপ্রাপ্ত খুনি আসামি; এরা কখনো এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেবে না।’

‘আমি একটা কথাই বলবো, নৌকা মার্কায় ভোট চাই। দেশের সেবা করে দেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন এবং আমার বিশ্বাস আছে বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দেবে’-যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুর্নীতি, অপশাসনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে জনগণের ভোটে তারা ক্ষমতায় আসেনি। তাই তাদের জনগণের কাছে কোন জবাবদিহিতাও ছিলো না। তাই খুন-হত্যা-লুট-সন্ত্রাস করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছিলো বিএনপি-জামায়াত সরকার। আর দেশের মানুষকে অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।’

২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করার অঙ্গীকার করে আওয়ামী লীগ সভাপতি  বলেন, ‘২০২০ থেকে ২০২১ এই বর্ষকে আমরা মুজিব বর্ষ হিসাবে ঘোষণা দিয়েছি। আমরা তার বছরব্যাপী শতবার্ষিকী উদযাপন করেই উদযাপন করবো আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই সুবর্ণজয়ন্তী যখন উদযাপন করবো বাংলাদেশ তখন বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, ইনশাল্লাহ।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনও মানুষ গৃহহারা থাকবে না, ক্ষুধার্ত থাকবে না। বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না। এটা আমাদের অঙ্গীকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেইভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজ নব্বই ভাগ মানুষের ঘরে আলো জ্বালাতে পেরেছি। বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত করতে পেরেছি। বাংলাদেশ যে আজ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ আজকে খুশি। গ্রামের মানুষ বিশেষ করে সব থেকে নারীরা বেশি উৎসাহিত। আমাদের মেয়েদের উন্নয়নের ব্যাপক সার্বিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি।’

পাশাপাশি দুঃস্থ মাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ও বিধবা, বয়স্ক ভাতা চালুর উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ভাতার ফলে সংসারে তারা একটি স্থান পাচ্ছে। তাকে আর ঘর সংসার ফেলে চলে যেতে হচ্ছে না। তার সমাজে একটা জায়গা হচ্ছে। এই সুযোগটা আমরা তার জন্য করে দিয়েছি। বাংলাদেশের যে ইতিহাস, যে চেতনা নিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’