এসভি ডেস্ক: এবার আমরণ অনশনের ঘোষণা দিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দকী। এর আগে রবিবার (১৬ ডিসেম্বর) নিজের ওপর টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সাংসদ ও এবারেরও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাছান ইমাম খান ওরফে সোহেল হাজারীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকতার কার্যালয়ের সামনে অশনন শুরু করেন লতিফ সিদ্দিকী।
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ওসির অপসারণসহ তিন দফা দাবির বিষয়ে প্রশাসনের সাড়া না পেয়ে এই আমরণের ঘোষণা দিয়েছেন। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে এক চিঠিতে এ ঘোষণার কথা জানান তিনি ।
চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমার অনশন ধর্মঘটের ১৮ ঘণ্টা অতিক্রান্ত; কিন্তু কোনো প্রতিকার না পেয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম একই সঙ্গে আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার।’ তিনি চিঠিতে আরও লিখেন, ‘আমার যদি কোনো ক্ষতি হয় সেজন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী থাকবে বলে ঘোষণা দিচ্ছি।’
আমরণ অনশন ঘোষণার পর সোমবার দুপুরে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন শরীফ হোসেন খান লতিফ সিদ্দিকীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী সাহেব উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তিনি ওষুধও খাচ্ছেন না। খাবার না খাওয়ায় ধীরে ধীরে তার শরীরের সুগার কমে যাচ্ছে। এতে শরীর নিস্তেজ হয়ে শারীরিক ঝুঁকি বাড়ছে।’
তারও আগে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ও নিকটাত্মীয়রা লতিফ সিদ্দিকীকে দেখতে যান। তখন লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার অনশন প্রতিবাদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়, সরকারের বিরুদ্ধে নয়, স্থানীয় সাংসদের সহিংসতামূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে।’
তিনি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছেন উল্লেখ করে বলেন, “দাবি মানা হলে কাউকে বলতে হবে না নিজেই চলে যাব, যতক্ষণ মানা না হবে ততক্ষণ কোথাও যাব না।”
এর আগে রবিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়া ইউনিয়নের সরাতৈল নির্বাচনী এলাকায় লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ উঠে। হামলার প্রতিকার চেয়ে দুপুর ২টা থেকে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকতার অফিসের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন তিনি।
এসময় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘সকালে কালিহাতীর গোহালিয়া বাড়ি এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় যাওয়ার সময় আমি ও আমার নেতাকর্মীরা হামলার শিকার হই। এসময় আমাদের ৪টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ইট পাটকেলের আঘাতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।’
তিনি বলেন, ‘সোহেল হাজারীর নির্দেশে স্থানীয় চেয়ারম্যান হযরত তালুকদার, তোতা ও তার ছেলের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। আমি গোহালীয়াবাড়িতে আমার নির্ধারিত সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে পৌঁছামাত্র ২০-২৫টি মোটরসাইকেলে চড়ে বেশ কিছু দুর্বৃত্ত আমাদের ওপর ইট-পাটকেল মারতে থাকে। আমি তখন সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলে সেখানেও আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি কালিহাতীতে অবস্থান করতে পারতাম। কিন্তু সেখানে অবস্থান করলে রাস্তাঘাট বন্ধ হবে, জনদুর্ভোগ হবে। সরকার বিব্রত হোক আমি তা চাই না। আমি শুধু হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
লতিফ সিদ্দিকী ২০১৪ সালে মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্যপদ হারানোর পর কালিহাতীতে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের সোহেল হাজারী। তার আগে তিনি হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের জন্যর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন।
লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হন। এরপর ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে মন্ত্রী হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন।