ফারুক হোসেন রাজ, কলারোয়া: মাল্টা চাষ করে ভাগ্য খুলেছে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের চাষী আক্তারুজ্জামানের(৩৪)।
১৯৮৪ সালে হেলাতলা (মুসলীম) মধ্যবিত্ত কৃষি পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন আক্তারুজ্জামান। তার বাবার নাম মৃত হাজী ফকীর আহম্মেদ মোড়ল। ২০০০ সালে (এস এস এসি) উত্তীর্ণ হওয়ার পরে পরিবারের দায়িত্ব এসে যায় বেকারত্ব জীবনেই। তাই ভাগ্যে জোটেনি লেখাপড়া, শুরু করেন চাষ কাজ ।
পর পর দুই বার বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে শুরু করেন কাঠের ব্যবসা । এরপর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ২০০৮ সালে সর্বপ্রথমে তিনি বাউকুল চাষ করে ১৪ জানুয়ারি ২০১৩ সালে গ্রামীণফোন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ১ম স্থান অধিকার করেন। সেই থেকে তার সাফল্যের যাত্রা শুরু পান।
চাষী আক্তারুজ্জামান বলেন, প্রথমে শখের বসে মাল্টা বাগান করেছিলাম। এরপর দেশের উন্নয়ন, বিদেশি ফল পরিত্যাগ ও ফরমালিন মুক্ত ফল উপহার দেওয়ার জন্য মাল্টা চাষ শুরু করেছি। ২০১৬ সালে বরিশালের নাজিরপুরে মাল্টার বাগান দেখে ইচ্ছা হয় মাল্টা চাষের। ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর কাঠ ব্যবসার সব টাকা দিয়ে বারী-১ জাতের ১ হাজার ৫টি মাল্টার চারা ৬ বিঘা জমিতে রোপন করি। মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে গাছে ফুল ধরা শুরু করেছে এবং এ বছর ফলের ধরনও সাফল্যজনক । প্রতিটি মাল্টা গাছে আশা করাযায় ৮০-৯০টি করে মাল্টা পাওয়া যাবে। রাসায়নিক মুক্ত এ মাল্টা খেতেও বেশ মিষ্টি। বছরের ৮ মাস গাছে মাল্টা থাকবে এবং এই ৮ মাসে প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কেজি মাল্টা পাওয়া যাবে। গত তিন বছরে গাছের চারা ও ফল বিক্রি করে যাবতীয় খরচ বাদে তুলনামূলক বাৎসরিক লাভ থাকে।
তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে মাল্টা চাষে সফলতা পেয়েছি। সে জন্য চাষের পাশাপাশি নিজেই কলম তৈরি করি যা এ বছর থেকেই লক্ষাধিক চাষযোগ্য বারি-১ মাল্টা চারা সম্পন্ন আছে আরও কয়েক একর জমিতে বানিজ্যিক ভাবে বড় পরিসরে মাল্টা চাষ করার ইচ্ছা রয়েছে। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ও সংসার চলছে উৎপাদিত মাল্টা ও মাল্টার চারা বিক্রি করে।
এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মহাসীন আলী জানান, কলারোয়া উপজেলাতে ২০১৬সালের ১৬ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম ৪৫০ টি মাল্টা পরিবর্তে একই বছর মেট ১০০৫টি চারা ক্রমন্বয়ে চাষ শুরু করে কৃষক আক্তারুজ্জামান। আক্তারুজ্জামান ছাড়াও বর্তমানে ৫-৬জন চাষী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ১৪-১৬ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেছেন। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে মাল্টা গাছ অনেক দিন বাঁচে এবং ফল পাওয়া যায়। সাধারণত চৈত্র-বৈশাখে ফুল আসতে শুরু করে। আমাদের দেশের আবহাওয়াতে এটি চাষ উপযোগী।
এ ব্যাপারে কলারোয়া কৃষি সম্প্রসারন অফিস বেকার যুবকদের আত্মকর্ম সংস্থানের লক্ষ্যে মাল্টা চাষে উৎসাহিত করছে এবং এ লক্ষ্যে কিছু চাষী বাছাই করা হয়েছে। তাদেরকে প্রশিক্ষণসহ সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা হবে।