Spread the love

ফিরোজ জোয়ার্দ্দার: সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলআপ বাতিল করায় পৌর সদরের গালর্স পাইলট হাইস্কুলের দুই পরীক্ষার্থী চেতনানাশক ঔষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। অচেতন অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে কলারোয়া সরকারী হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে এই ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই পরীক্ষার্থী জানান, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলআপ বাবদ ৪ হাজার ৬’শ টাকা স্কুল থেকে ফেরত দেয়ায় তারা বাধ্য হয়ে আত্নহত্যার চেষ্টা চালায়।

এছাড়া তারা আরোও বলেন, দশম শ্রেণীর টেষ্ট পরীক্ষা অংশ গ্রহণ করে ১২৫ জন পরীক্ষার্থী। ৫৭ জন পরীক্ষার্থীকে পাশ করিয়ে বাকি ৬৮ জন পরীক্ষার্থীকে ফেল করানো হয়। প্রথম রি- টেষ্ট পরীক্ষায় ৩০ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। তাদের সবাইকে পাশ করানো হয়ে পরবর্তীতে ৩৮ জনের একই প্রশ্নে পরীক্ষা হয়। কিন্তু পরে তাদের ৩৮ জনের খাতা বাতিল করে দিয়ে আবার নতুন করে নতুন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়। সেই প্রশ্ন থেকে কঠিন দাগগুলো মার্ক করে দেয়া হয়ে তার থেকে দুই জন পরীক্ষার্থীকে পাশ করানো হয়। কিসের জন্য ৩০ জন পরীক্ষার্থীকে একই প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়ে পাশ করানো হলো এবং ৩৬ জন পরীক্ষার্থীকে ভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হলো। ঔই সকল পরীক্ষার্থী ফেল করার পরেও কেন তাদের অবৈধভাবে উত্তীর্ণ করা হলো এবং তাদের এই ২৩ জন পরীক্ষার্থীকে কেন ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তীর্ণ করা হলো না। তাদের এই ২৩ জন পরীক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে বলে উপজেলা প্রশাসনের কাছে দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবী করেন।

তাছাড়া গত ২২ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরএম সেলিম শাহনেওয়াজের কাছে পরীক্ষার্থীরা মৌখিক অভিযোগ করলে টিএনও গার্লস পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বদরুজ্জামান বিপ্লবকে তার অফিসে ডেকে নেন এবং প্রশ্ন করেন আপনি (হেড মাস্টার) দুই রকম প্রশ্নে কিভাবে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেন।

প্রধান শিক্ষক বিপ্লব কোন জবাব না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন। পরে টিএনও মহাদয় ফেল করা পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে বিবেচনার জন্য প্রধান শিক্ষককে আহবান করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বিপ্লব, টিএনওর কথা না শুনে নিজেই এক তরফায় চটে বসেন।

আত্মহত্যার চেষ্টাকারী ওই দুই পরীক্ষার্থী হলেন- কলারোয়া বাজারের বাসিন্দা কাজিরহাট কলেজের প্রভাষক বিএম সিরাজুল ইসলামের মেয়ে সাদিয়া আফরিন দোলা (১৬) ও পৌরসদরের গদখালী গ্রামের মামুন হোসেনের মেয়ে ফারজানা আক্তার মিম (১৬)।

কলারোয়া হাসাপাতালে সরেজমিনে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত ফরম ফিলআপ বাতিল হওয়া অপর দুই পরীক্ষার্থী ফজিলাতুন্নেছা দিশা ও ফারজানা জামান জানান- ‘ওই দুই অসুস্থ্য বান্ধবীসহ আমরা ৬ জন বান্ধবী ফরম ফিলআপ বাবদ প্রত্যেকেই স্কুলে ৪ হাজার ৬’শ টাকা করে জমা দেই। কিন্তু ফরম ফিলআপের শেষ দিন ২২ নভেম্বর স্কুল থেকে একেক দিন একেক জনের জমাকৃত টাকা ফেরত দিয়ে বলে দেয়া হয়, যে তোমাদের ফরম ফিলাম করা সম্ভব হবে না। এরপর তারা স্কুলের প্রধান শিক্ষক বদরুজ্জামান বিপ্লব, সহকারী প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান, পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আলহাজ্ব শেখ আমজাদ হোসেনসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরএম সেলিম শাহনেওয়াজের সাথে যোগাযোগ করেও কোন ফল না পাওয়ায় তাদের দুই বান্ধবী দোলা ও মিম চেতনানাশক ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে অবশেষে ব্যর্থ হয়।

অসুস্থ্য দোলার পিতা বিএম সিরাজুল ইসলাম জানান- সোমবার দুপুরের ভাত খেয়ে মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘুমন্ত মেয়েকে ডাকতে গেলে কোন সাড়াশব্দ না পাওয়ায় তাৎক্ষনিকভাবে মেয়েকে কলারোয়া হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করে দেন। এর পরপরই দোলার আরেক বান্ধবী মিমকেও একই অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত নার্গিস ফাতেমা জানান- তারা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছে। আশংকাজনক থাকলেও বর্তমানে তাদের অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

অভিযুক্ত গার্লস পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বদরুজ্জামান বিপ্লব জানান- ফরম ফিলআপ বাবদ ৪ হাজার ৬’শ টাকা গ্রহণ বা ফেরতের বিষয়টি আমি জানি না। তবে তারা নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় তাদের ফরম ফিলআপ করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ফেল করা পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলআপ করা সরকারের নিয়ম নীতির বাহিরে। এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জানান- দুই পরীক্ষার্থীর আত্নহত্যার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানবিক দৃষ্টিতে এগিয়ে আসলে হয়তো পরীক্ষার্থীদের মঙ্গল হতো। অসুস্থ পরীক্ষার্থীদের হাসপাতালে দেখতে যাবেন বলে তিনি জানান।