এসভি ডেস্ক: বিএনপি অংশ নেওয়ায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তাই শরিকদের এবার উদারহস্তে আসন দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের সিদ্ধান্ত, লড়াই করে জেতার মতো প্রার্থী থাকলে তবেই মহাজোটের মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ শর্তে আটকে যাচ্ছে শরিকরা। প্রত্যাশিত সংখ্যক আসন পাচ্ছে না তারা। দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় কোনো কোনো নেতারও মনোনয়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তারা ব্যাপকভাবে নাখোশ।
গতকাল শনিবার ১৪ দলের কয়েকটি শরিক এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে পৃথক বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, শরিকদের জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী থাকলে তাদের জন্য ৬৫ থেকে ৭০টি আসন ছাড়া হবে। জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার আসন ভাগাভাগিকে কম গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেও দলটির সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের এ অবস্থানে তারা হতাশ।
এদিকে, আজ রোববার মহাজোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার প্রস্তুতি থাকলেও শেষ মুহূর্তের রদবদলের সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে তা করা হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আগামীকাল সোমবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতে পারে। আওয়ামী লীগ থেকে ইতিমধ্যে বলা হয়েছে, সব দলের সঙ্গে আসন বণ্টন ও সমঝোতার পরই আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থী তালিকা একত্রে ঘোষণা করা হবে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপা। দলটির দাবি ছিল ১০৫ আসন। পরে ৭৬টি আসনের তালিকা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সেখান থেকে ৫১টি আসনের দাবি জানায় দলটি। গতকালের বৈঠকে জাপার দাবি ছিল অন্তত ৪৩ আসন। জাপা নিশ্চয়তা পেয়েছে মাত্র ২২টি আসনে। আরও ১৬টি আসন জাপাকে দেওয়া হতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এরশাদের দরকষাকষির ওপর। বর্তমান সংসদে জাপার এমপি ৩৬ জন।
সূত্র নিশ্চিত করেছে, জাপার একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা মহাজোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন না। বিএনপিবিহীন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাপার অংশগ্রহণে অন্যতম ভূমিকা ছিল দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর। চট্টগ্রাম-৯ আসনের এই এমপি আসন্ন নির্বাচনে মহাজোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন না। এ আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের। কপাল পুড়ছে জাপার আরও কয়েকজন এমপির।
বৈঠকে অংশ নেওয়া জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য সমকালকে বলেছেন, অবস্থা সুবিধার নয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলের এই নেতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ আগে ৬০টি আসন দেওয়ার কথা বললেও এখন ৩৮টির বেশি দিতে নারাজ। গতকালের বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিরা গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে বসেছিলেন। জাপা যেসব আসন চেয়েছে, সেখানে লাঙ্গলের কত ভোট আছে, তা তুলে ধরেছেন। ভোটের মাঠে দুর্বল অবস্থার কারণে জাপাকে বেশি আসন ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি জাপা মহাসচিব। রুহুল আমিন হাওলাদার সমকালকে বলেন, আলাপ-আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর ওপর জাপার আস্থা ও বিশ্বাস আছে। তিনি কাউকে বঞ্চিত করবেন না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মনোনয়ন পাচ্ছেন না জেনে প্রকাশ্যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। গতকাল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে দলের মহাসচিবের গুলশানের বাসভবনে গিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন তিনি। বৈঠকে না যেতে অনুরোধ করেন। তার দাবি ছিল, প্রত্যাশিত সংখ্যক আসন না পেলে জাপা এককভাবে নির্বাচন করবে। তবে এ বিষয়ে জিয়াউদ্দিন বাবলুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার-১ আসনে জাপা এবার আর মহাজোটের মনোনয়ন পাচ্ছে না। সরকারি সংস্থার জরিপের তথ্যমতে, এখানে জাপার ভোট হাজারের কাছাকাছি। এর বদলে খাগড়াছড়ি আসন জাপা পেতে পারে বলে সূত্রের দাবি। ফেনী-৩ আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর। ওয়ান-ইলেভেনের আলোচিত এই সেনা কর্মকর্তা আওয়ামী লীগেরও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। পরে যোগ দেন জাপায়।
ঢাকায় ছয়টি আসন চেয়েছিল জাপা। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-৪ আসনে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও ঢাকা-৬ আসনে কাজী ফিরোজ রশীদের মনোনয়ন নিশ্চিত। এরশাদ ঢাকা-১৭ আসন চেয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনও চান তিনি। এ দুটি আসনের যে কোনো একটি বেছে নিতে হবে তাকে। ঢাকা-১৮, ঢাকা-১৩ ও ঢাকা-৫ পাচ্ছে না জাপা। ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালমান এফ রহমান। গত নির্বাচনে ওই আসনে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন জাপার সালমা ইসলাম। কিন্তু এবার তার মনোনয়ন নিশ্চিত নয় এখনও। জাপা সূত্র জানিয়েছে, আসনটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হতে পারে।
নীলফামারী-৪, রংপুর-১, রংপুর-৩, কুড়িগ্রাম-১, কুড়িগ্রাম-৩, গাইবান্ধা-১, লালমনিরহাট-৩, ময়মনসিংহ-৮, কিশোরগঞ্জ-৩, নারায়ণগঞ্জ-৫, সিলেট-৫, সুনামগঞ্জ-৪, বরিশাল-৬, ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২, কুমিল্লা-২, লক্ষ্মীপুর-২ এবং চট্টগ্রাম-৫ আসনে জাপা মহাজোটের মনোনয়ন পাবে বলে জানিয়েছে দলটির সূত্র। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ-৪ এবং ময়মনসিংহ-৭ আসনে নির্বাচন করতে চান। জাপা সূত্র জানিয়েছে, তবে তাকে যে কোনো একটি আসন ছাড়তে রাজি আওয়ামী লীগ। রংপুর-২, রংপুর-৪, রংপুর-৫, গাইবান্ধা-৩, ঠাকুরগাঁও-৩, নীলফামারী-১, নীলফামারী-৩, লালমনিরহাট-১, বগুড়া-২, বগুড়া-৭, পটুয়াখালী-১, বরিশাল-২, মৌলভীবাজার-২, সাতক্ষীরা-২ এবং হবিগঞ্জ-১সহ ১৬টি আসন নিয়ে আলোচনা চলছে। জাপা এগুলো চায়। এর বাইরে আরও ৫টি আসন চায়।
১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি গত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল ৬টি আসনে। ৩২ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন চাওয়া ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেতে পারে। তাদের একজন বর্তমান এমপি বাদ পড়তে পারেন। দলীয় সভাপতি রাশেদ খান মেননের ঢাকা-৮, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার রাজশাহী-২, ইয়াসিন আলীর ঠাকুরগাঁও-৩, মুস্তফা লুৎফুল্লাহর সাতক্ষীরা-১ এবং টিপু সুলতানের বরিশাল-৩ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন নিশ্চিত বলে জানা গেছে। নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ জাতীয় ক্রিকেটের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে প্রার্থী করায় এই আসনটিতে ছাড় দিতে হচ্ছে ওয়ার্কার্স পার্টিকে। এর বদলে ওয়ার্কার্স পার্টি মেহেরপুর-২, যশোর-৪ ও নাটোর-১ আসন চেয়েছে। আওয়ামী লীগ তাদের জানিয়ে দিয়েছে, যশোর-৪ আসনের বর্তমান এমপি রণজিত কুমার রায়ের জয়লাভের সম্ভাবনার বিচারে এগিয়ে, তাই আসনটি ছাড়া সম্ভব নয়।
জাসদ গত নির্বাচনে জিতেছিল ৫টি আসনে। দুই ভাগে ভাগ হওয়া যাওয়া হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ এবার ১৫ আসন চেয়েছে। তাদের দখলে রয়েছে তিনটি আসন। আসন্ন নির্বাচনে তারা দুটি আসন পেতে পারে। দলীয় সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের ফেনী-১ আসনের মনোনয়নপ্রাপ্তি নিশ্চিত। তবে আরেক এমপি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের বগুড়া-৪ আসনে এবার আওয়ামী লীগের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা আছে। জাসদ ভেঙে গঠিত বাংলাদেশ জাসদের বর্তমান দুই এমপি দলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানের পঞ্চগড়-১ এবং কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদলের চট্টগ্রাম-৮ আসনও নিশ্চিত হয়ে আছে। দলীয় সভাপতি শরিফ নূরুল আম্বিয়ার জন্য নড়াইল-১ আসনটি চাইছে দলটি। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগের এমপি কবিরুল হক মুক্তির প্রার্থিতা প্রায় চূড়ান্ত বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
গত নির্বাচনে জেপি ও তরীকত ফেডারেশন দুটি করে আসন পেয়েছিল। আসন্ন নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসনে জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মনোনয়ন পাওয়া নিশ্চিত। কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এমপি রুহুল আমিনের মহাজোটের মনোনয়ন অনিশ্চিত। দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামের জন্য একটি আসন চাইলেও সে আবেদনে সাড়া মেলেনি।
একই অবস্থা তরীকতের। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারির চট্টগ্রাম-২ আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত। তরীকতের বহিস্কৃত মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপির লক্ষ্মীপুর-১ আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত নয়। তার আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে তরীকতে যোগ দেওয়া আনোয়ার খান।
এম এ আউয়াল এখন ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স নামে একটি জোটের কো-চেয়ারম্যান। এ জোট থেকে কেবল আউয়ালের আসনটি নিশ্চিত করার চেষ্টা চললেও সেটিও সফলতা পায়নি।
১৪ দলের বাকি শরিকদের কারও আসন পাওয়া এখনও নিশ্চিত নয়। নিবন্ধিত দল ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি ও সাম্যবাদী দলের আসন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া চট্টগ্রাম-১ আসন চান। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনেও কোনো আসনে ছাড় পায়নি এ তিনটি দল। এছাড়া ১৪ দলের আরেক শরিক কমিউনিস্ট কেন্দ্র দুটি আসনের মনোনয়ন চাইছে। গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং বাসদও (রেজাউর) মূল্যায়ন আশা করেছিল। কিন্তু নিবন্ধনবিহীন এই চারটি দলও কোনো আসন পাচ্ছে না।
মহাজোটে যোগ দেওয়া ইসলামী ফ্রন্ট চাঁদপুর-৫ আসন চায়। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী মনোনয়ন পেতে পারেন, এমন সম্ভাবনার কথা শোনা গিয়েছিল। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলে চাঁদপুর-৫ আসনের বর্তমান সাংসদ রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম দল ছাড়তে পারেন; এমন গুঞ্জনের কারণে ইসলামী ফ্রন্টের আসন পাওয়ায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। মহাজোটে আসতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন জোট যুক্তফ্রন্ট। সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ২২টি আসনের দাবি জানিয়েছে। তবে মাত্র দুটি আসনে নিশ্চয়তা পেয়েছে এখন পর্যন্ত। বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ-১ এবং মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মনোনয়ন পাওয়া নিশ্চিত। বিএনপি ছেড়ে দলে যোগ দেওয়া শমসের মবিন চৌধুরী চেয়েছেন সিলেট-৬। এ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের সভাপতিম লীর সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শমসের মবিনের মনোনয়ন অনিশ্চিত। একই অবস্থা বিএনপি থেকে যুক্তফ্রন্টে যোগ দেওয়া এম এম শাহীনের। তিনি চান মৌলভীবাজার-২ আসন। এ আসন চায় জাপা। জাপার সাবেক দুই এমপি গোলাম সারোয়ার মিলন মানিকগঞ্জ-২ ও গোলাম রেজা সাতক্ষীরা-৪ আসনে মনোনয়ন চান। যুক্তফ্রন্টের শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের জেবেল রহমান গাণি নীলফামারী-১ আসনে মনোনয়ন চান। তবে কেউ নিশ্চয়তা পাননি এখনও।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে আসা ইসলামী ঐক্যজোটও মহাজোটে ভিড়তে চেয়েছিল। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট এ দলটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩, কুমিল্লা-১, নরসিংদী-৩, চট্টগ্রাম-৫সহ ১০টি আসন দাবি করেছিল। আওয়ামী লীগ তাদের শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে, তাও শর্তসাপেক্ষে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকলেও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী প্রয়াত ফজলুল হক আমিনীর ছেলে আবুল হাসনাত আমিনীকে লড়তে হবে জাপার সঙ্গে। এ শর্তে নারাজ ইসলামী ঐক্যজোট। দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, বিএনপি জোট ছেড়ে আওয়ামী লীগের দিকে এসে আসন না পেয়ে হতাশ বোধ করছেন তারা। বিএনপির জোটেও আর ফেরার সময় নেই।
জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সল চেয়েছিলেন ফরিদপুর-৪ আসনের মনোনয়ন। সেখানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ শক্তিশালী প্রার্থী হওয়ায় মোস্তফা আমীর ফয়সলকে ফরিদপুর-২ আসন ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনার কথা শোনা গিয়েছিল। এই আসনের বর্তমান এমপি সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী নির্বাচনে অংশ নেবেন, এমন সিদ্ধান্তের পর জাকের পার্টির আসন পাওয়া অনিশ্চিত।
এছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে বিজয়ী হওয়ায় এবারও এই আসনের মনোনয়ন চাইছিলেন। ইতিমধ্যে তার দাবি এক রকম নাকচ হয়েছে। জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছাড়াও তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এই আসনে মহাজোটের মনোনয়ন চাইছেন। তবে দুর্নীতি মামলায় সাজা খাটায় ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
এদিকে, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি এবং বিএনএফের চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। এছাড়া আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতায় আসতে শেষ মুহূর্তে শরিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দলীয় সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৈঠক করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাংলাদেশ জাসদ, সাম্যবাদী দল, ন্যাপ এবং গণতন্ত্রী পার্টি নেতাদের সঙ্গে। এসব বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও বাংলাদেশ জাসদকে কয়টি আসনে ছাড় দেওয়া হচ্ছে তা জানিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে আবারও ক্ষমতায় যেতে পারলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাযথ মূল্যায়ন করবেন বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সাম্যবাদী দল, ন্যাপ এবং গণতন্ত্রী পার্টি নেতাদের। সূত্র: সমকাল।