Spread the love
এসভি ডেস্ক: রোগীর টিপ সই ও এক্স-রে জালিয়াতির মাধ্যমে ডাক্তারি সনদপত্র প্রদানের অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে সদ্য অবসরে যাওয়া সিভিল সার্জনসহ ছয়জনের নামে মামলা হয়েছে। 
সোমবার সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার এনায়েতপুর শানপুকুর গ্রামের মারুফা খাতুন বাদী হয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলাটি করেন। এখনো পর্যন্ত মামলার আদেশ জানা যায়নি।
মামলার আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সদ্য অবসরে যাওয়া সিভিল সার্জন ডা. তওহীদুর রহমান, সদর হাসপাতালের অফিস সহকারী আক্তারুজ্জামান, সেবিকা সানজিদা পারভিন, সাবেক আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফরহাদ জামিল, ডা. মাহাবুবর রহমান ও অবসরে যাওয়া ডা. পরিমলকুমার বিশ্বাস।
পাটকেলঘাটা থানার এনায়েতপুর শানতলা গ্রামের মৃত শাহবাজ ফকিরের মেয়ে স্কুলশিক্ষিকা মারুফা খাতুনের দায়ের করা মামলা থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ২৮ মে তিনি ও তার ছোট বোন বেবী নাজমিন প্রতিপক্ষের দা ও লাঠির আঘাতে জখম হয়ে ওই দিন বিকেলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির আগে তাদের সঙ্গে পরিচয় হয় হাসপাতালের অফিস সহকারী আক্তারুজ্জামানের। পরদিন তাদেরকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বললে তারা বিষয়টি আক্তারুজ্জামানকে অবহিত করেন। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে ৩০ মে সকালে একজন সেবিকার দেওয়া এক্স-রে স্লিপ নিয়ে তিনি আক্তারুজ্জামানের কাছে যান। আক্তারুজ্জামান সেবিকা সানজিদাকে ডেকে তাদেরকে এক্স-রে করিয়ে আনার জন্য বলে দিয়ে ৭০০ টাকা দিতে বলেন। টাকা নিয়ে সানজিদা তাদের দুই বোনকে ১২৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে এক্স-রে করিয়ে ছেড়ে দেন। সন্ধ্যায় সানজিদা দুটি এক্স-রে প্লেট তাদের দেন। ৩১ মে সকাল দশটার দিকে তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর পরপরই ছাড়পত্র, এক্স-রে প্লেট ও এক্স-রে রিপোর্ট  নিয়ে আক্তারুজ্জামানের কাছে গেলে তিনি অন্য সব রেখে দিয়ে ছাড়পত্র দুটিতে ২৯ মে এর স্থলে কাটাকাটি করে ৩০ মে নিজ হাতে লিখে তার কাছে দিয়ে দেন। মারপিটের ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে পাটকেলঘাটা থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার আসামিদের বাঁচাতে আক্তারুজ্জামান ও সানজিদার পরামর্শ অনুযায়ী ডা. ফরহাদ জামিল, ডা. পরিমলকুমার বিশ্বাস ও ডা. মাহাবুবর রহমানের স্বাক্ষরিত সদর হাসপাতালের ডাক্তারি সনদে অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরে ১৭ জুলাই প্রতিকার চেয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন বরাবর একটি অভিযোগ করেন। 
প্রতিকার না পাওয়ায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী সিভিল সার্জনের নির্দেশে গঠিত তদন্ত টিমের সদস্যদের কাছে তারা দুই বোনসহ কয়েকজন সাক্ষী দেন। এ সময় আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও সিভিল সার্জন তাদেরকে একটি কাগজে তিনটি টিপ সই দেখিয়ে বলেন, মাসহ তারা দুই বোন এক্স-রে না করার জন্য ওই টিপ সই দিয়ে গেছেন। প্রতিবাদ করায় হস্তরেখাবিদের কাছে পাঠানোর জন্য তাদের কাছ থেকে একটি নতুন কাগজে তিনটি টিপ সই নেওয়া হয়। তদন্তকারী টিমের সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা আক্তারুজ্জামান ও সানজিদাকে শনাক্ত করেন। 
দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও কোনো তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া বা দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি ১১ অক্টোবর সিভিল সার্জনের কাছে গেলে তাকে কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দিয়ে চলে যেতে বলা হয়।
জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ও তদন্ত কমিটির সদস্য ডা. জয়ন্ত সরকার জানান, তদন্তে দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে আক্তারুজ্জামানকে বদলির জন্য সুপিারিশ করেন তারা।
সদ্য অবসরে যাওয়া সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. তওহীদুর রহমান বলেন, বিষয়টি তার খেয়াল নেই।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোসলেমউদ্দিন জানান, সোমবার বিকেল পর্যন্ত মামলার আদেশ জানা যায়নি।