বিশেষ প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডাঃ এসএম জাকির হোসেন জরুরী কাজে ছুটি নিয়ে ভারতে যাওয়ার কারনে ইনডোরে কোন রোগী ভর্তি করানো হচ্ছে না। ফলে সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত এলাকা হতে আসা রোগীরা চরম বোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া ভর্তি না করানোর কারণে অসুস্থ শিশুকে নিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে অনেক অভিভাবকদের ।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা শহরতলীর রসুলপুর এলাকায় অবস্থিত সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে যেয়ে দেখা যায়, সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের ইনডোরে কোন রোগী নেই। হাসপাতালের প্রায় ৭৫টি সিটই খালি। দুইজন নার্স বসে বসে অলস সময় পার করছেন।
জানতে চাইলে সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের নার্স সাবিনা খাতুন বলেন, অফিস কোন রোগী ভর্তি করছে না। জাকির স্যার ছুটিতে যাওয়ার পর হতে কোন রোগী ভর্তি নেই। এ জন্য বসে আছি। তবে কোন সিনসেটিভ রোগী আসলে ডাক্তারদের পরামর্শে ভর্তি করা হচ্ছে।
ইনডোর থেকে নামতেই সংবাদকর্মী বুঝতে পেরে একজন ছুটে এসে বললেন ভাই আমি শিশু হাসপালের কমিটির একজন সদস্য। আমার কিছু কথা আছে। তবে নামটি বলা যাবে না। এরপর তিনি বললেন, ১৯৮৬ সালে সাতক্ষীরার শিশুদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষে জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ এম আর খান স্যার এই হাসপাতালটি স্থাপন করেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল একটি নাম করা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। একটি তবে গত শনিবার সকালে ডাঃ জাকির হোসেন স্যার ভারতে যাওয়ার পর যা হলো তাতে এই হাসপাতালের সুনাম অনেকাংমে ম্লান হয়ে গেছে।
তিনি ছুটি নিয়ে ভারতে যাওয়ার পরে ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক ও ডাঃ মোস্তফা নুর মোহাম্মদ স্যার কোন রোগীকে ভর্তি করছেন না। রোগী ভর্তি করলে প্রতিদিন বিকালে রাউন্ড দিতে হয়। নিজেদের প্রাইভেট চেম্বার ফেলে রাউন্ড দিতে হবে বলে তারা রোগী ভর্তি না করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আমি সকাল ১০ টার দিকে এখানে এসে দেখি ইনডোরের বিল্ডিং এর গেটে তালা লাগোনো। কোন রোগী ভর্তি নেই। এর আগে বুধবার রাতে খুব অসুস্থ ৪ জন রোগীকে ভর্তি না করে ফেরত দেওয়া হয়েছে। যে কারণে এখানে এসে সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনরা সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এখানে ডাঃ জাকির হোসেন ছাড়াও দুইজন ইন্টার্ণি ডাক্তার আছেন। তারা দুপুর ২ টার দিকে এসে পরদিন সকালে চলে যান। রোগী ভর্তি করা হলে তারাতো অন্তত রোগীদের দেখাশোনা করতে পারতেন।
ডাঃ জাকির হোসেন ছুটিতে যাওয়ার আগে কতজন রোগী দৈনিক ভর্তি হতো জানতে চাইলে সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের কর্মচারী জুয়েল হাসান বলেন, গত মাসের ২৬ হতে ২ তারিখ পর্যন্ত ৫৫ জন রোগীকে ভর্তি করা হয়েছিল।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক রোগী ভর্তি না করানোর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কনসালটেন্ট ছুটিতে আছেন। এজন্য কোন রোগী ভর্তি করছি না। গুরুতর অসুস্থ রোগী ভর্তি করা হলে যদি কোন কিছু হয়ে যায় তখন তার দায়িত্ব কে নেবে? আমরা কোন ঝুঁকি নিতে পারবো না।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ তোহিদুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, জাকির সাহেব বেশ কিছুদিন সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে জয়েন্ট করেছেন। তিনি আসার আগেও ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক ও ডাঃ মোস্তফা নুর মোহাম্মদ রোগী দেখেছেন এবং রোগী ভর্তি করেছেন। তবে ডাঃ জাকির হোসেন না থাকার অজুহাতে রোগী ভর্তি না করার কোন কারণ নেই।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ব্যাপারটি আমাকে কেউ জানায় নি। এখনই আমি বিষয়টি দেখছি।