Spread the love

এসভি ডেস্ক: ভোটের আগে জোটের রাজনীতির ফাঁদে পড়ে দ্বিখণ্ডিত হতে চলেছে বি চৌধুরী-মান্নানের গড়া দল বিকল্পধারা। দলটির একটি অংশ পাল্টা-বিকল্পধারা  গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেবল তাই নয়, নিজেদের  মূলস্রোত দাবি করে  দল থেকে  বি চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান এবং  যুগ্ম  মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীকে বহিস্কার করে  ৭১ সদস্যের একটি নতুন কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছে বিকল্পধারার বিদ্রোহী গ্রুপ।

এ উদ্দেশ্যে  শুক্রবার ( ১৯ অক্টোবর) বিকেলে  জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে।  এতে বিকল্পধারার তিন প্রতিষ্ঠাতাকে বহিস্কার করে  নতুন নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হবে। এর মধ্য দিয়েই বিকল্পধারা দুইভাগে বিভক্ত হতে চলছে।

বি চৌধুরীরর বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নূরুল আমীন বেপারী হচ্ছেন নতুন অংশের সভাপতি,কমিটিতে   মহাসচিব হচ্ছেন শাহ আলম বাদল আর জানে আলম হাওলাদারকে করা হচ্ছে যুগ্ম মহাসচিব। নতুন বিকল্পধারার ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে যারা আসছেন তাদের সিংহভাগই হলেন আগের নির্বাহী কমিটির সদস্য।

জানতে চাইলে নতুন অংশের মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল বলেন,  জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে একটা বড় প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রের অধিকার আদায় সম্ভব হবে বলে আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে যারা বিকল্পধারায় আছি, তারা আশাবাদি হয়ে ওঠেছিলাম। কিন্তু মাহি বি চৌধুরী আমাদের কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার আগে নানাশর্ত জুড়ে দেন।  এবং একটা সময় এককভাবেই তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে কথা বলারও প্রয়োজন মনে করেননি। বিকল্পধারার চেয়ারম্যান ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী এ ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন। তবে বাবার নাম ব্যবহার করে  রাজনীতিতে আসা মাহী বি. চৌধুরীর এমন সিদ্ধান্তে দলের অধিকাংশ নেতা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমরা একটি অংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরই মধ্যে আমাদের  তলবি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার আমরা  প্রেস কনফারেনন্স ডেকেছি, সেখানে আমরা নতুন কমিটি ঘোষণা করবো।

তিনি  বলেন,  বিকল্পধারা জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের সঙ্গেই থাকবে। সারাদেশে দলটির নেতাকর্মীরা নতুন নেতৃত্বের বিকল্পধারার জন্য অপেক্ষা করছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে নির্বাচনের আগেই দলটি কাউন্সিল করবে জানিয়ে দলটির সিনিয়র কয়েকজন নেতা বলছেন, নতুন উদ্যমে শুরু হওয়া বিকল্পধারা জাতীয় নির্বাচনের আগেই কাউন্সিল করে কমিটি দিবে। তবে যদি কোনো কারনে তা সম্ভব না হয় তবে নির্বাচনের পরে কাউন্সিল হবে।

অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল আরো বলেন, বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় কমিটি ৭১ সদস্যের হলেও এখন রয়েছে ২৫ থেকে ২৬ জন। এর মধ্যে কৃষিবিষয়ক সম্পাদক জানে আলম, সমবায়বিষয়ক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবলু, যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার জোবায়ের, প্রচার সম্পাদক প্রকৌশলী জুন্নু, কৃষক ধারার আহ্বায়ক চাষী এনামুল, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক শিপরা রহিম, সদস্য নুর মুহাম্মদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মতিনসহ ১৭ জনই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।

‌দলের একটি সূত্র জানায় , বি. চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দলের সিনিয়র সহ সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী কয়েকদিন আগে বারিধারার বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি বি. চৌধুরীকে ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, জাতীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য মানুষ যা চায় তাই করেন। কিন্তু তার মতামত উপেক্ষিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্রোহী অংশের সঙ্গে তিতি যোগাযোগ করেন। পরে তাকেই নতুন কমিটিতে সভাপতি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে  বিএনপির সঙ্গে জড়িত ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী  ২০০৪ সালে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে সরে দাড়াতে বাধ্য হন। এরপর তিনি দলত্যাগ করে  বিএনপির আরেক নেতা মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানকে নিয়ে গড়ে তোলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশ। প্রতীক হিসেবে দলটি বেছে নেয় কুলা। প্রতিষ্ঠার এই ১৪ বছরে  বিকল্পধারার কোনো কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও সামাজিক উদারতাবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত এ দলটি তৃণমূলে আজ পর্যন্ত কোনো সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তুলতে পারেনি।

আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, নিজ দলের নির্বাহী কমিটির সিংহভাগ সদস্য যখন বিদ্রোহী অংশে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, সেখানে নির্বিকার বি. চৌধুরীসহ  দলের অপর  দুই শীর্ষনেতা মান্নান ও মাহি। নিজ দলের পুরনো কমীদের ধরে  রাখার কোনো উদ্যোগ না নিয়েই বিএনপি বেনতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে আসা ন্যাপ আর এনডিপিকে নিয়ে নতুন জোট গঠনে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।