এসভি ডেস্ক: স্কুলে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়েছিল রিমা আক্তার (১৩)। কিন্তু স্কুলে সে যেতে পারেনি। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় পথরোধ করে রিমাকে ধরে এনে উপর্যূপরি ছুরিকাঘাতে খুন করে বখাটে নজরুল ইসলাম মাসুদ (২২)।
শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়নের বেলতল রেললাইনের পাশের বিল থেকে রিমার রক্তাক্ত নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় রিমার শরীরের স্কুলড্রেসে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ দেখে স্থানীয়দের মাঝে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
সে সময় বখাটে মাসুদের দেহও ছিল রক্তাক্ত। প্রথমে তাকেও মৃত ভেবেছিল স্থানীয় লোকজন ও পটিয়া থানা পুলিশ। পরে নড়াচড়া করার সময় তার গোঙানীর শব্দ পেয়ে দ্রুত তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে পটিয়া থানায় এসে মেয়ে হত্যার জন্য বখাটে নজরুল ইসলাম মাসুদকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন রিমার বাবা মঞ্জুরুল আলম।
মামলার অভিযোগে তিনি স্কুলে যাওয়ার পথ থেকে জোরপূর্বক ধরে এনে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে রিমা আক্তারকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
মামলার অভিযোগে মঞ্জুরুল আলম বলেন, তার মেয়ে রিমা আক্তার পটিয়া হাইদগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার পথে বখাটে নজরুল ইসলাম মাসুদ রিমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করতো। রিমা এ কারণে গত কয়েকমাস ধরে স্কুলেও যেতে চাইতো না।
তিনি জানান, গত শনিবার সকালে রিমা স্কুলে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে রিমার লাশ উদ্ধারের খবর দেওয়া হয় থানা থেকে।
হাঁইদগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক শ্যামল দে বলেন, স্কুল খোলা থাকলেও রিমা শনিবার স্কুলে আসেনি। দুপুরে পুলিশ কল করে জানায়, রক্তাক্ত অবস্থায় রিমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বখাটে নজরুল ইসলাম মাসুদ এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। কিন্তু প্রায় সময় সে হাইদগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে বখাটেপনা করত। রিমাকে সে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রায় উত্যক্ত করত। কিন্তু রিমা তার প্রস্তাব এড়িয়ে যেত।
ঘটনার দিন শনিবার স্কুলে যাওয়ার পথে রিমার পথরোধ করে প্রেমের প্রস্তাব দেয় মাসুদ। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় রিমাকে ধরে নিয়ে যায়। বিকেলের দিকে ভূর্ষি ইউনিয়নের বেলতল রেললাইনের পাশের বিল থেকে রিমার রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়ার খবর প্রকাশ পায়। রিমার দেহের উপর বখাটে মাসুদের রক্তাক্ত দেহ পাওয়ার খবর পেয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ জানান, রেললাইনের পাশে তাদের নিথর দেহ দেখে থানায় খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এ সময় স্কুলছাত্রীর রিমার দেহ জড়ানো ছিল বখাটে মাসুদের।
পুলিশ তখন রিমার পরিচয় পেলেও মাসুদের পরিচয় পায়নি। পরে রিমার বাবা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে মাসুদের পরিচয় পাওয়া যায়। সে পটিয়া পৌর সদরের ৯নং ওয়ার্ডের গোবিন্দারখীল ফইল্লাতলি আমির ভান্ডারের পুরাতন বাড়ি এলাকার আবুল কালামের পূত্র।
এদিকে রাতে ঘটনার বিবরণ জানার পর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। রিমার বাবা মঞ্জুরুল আলম বাদি হয়ে এ মামলা করেন। খবর দেওয়া হলেও মাসুদের মা-বাবা কেউ এখনো পর্যন্ত থানায় আসেননি। শুনেছি তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছেলের কাছে গেছেন। বর্তমানে সে পুলিশ হেফাজতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ১৯ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে। একই সঙ্গে পোস্টমর্টেমের জন্য রিমা আক্তারের মরদেহও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম জানান, মেয়েটির পেটে একাধিক ছুরিকাঘাত রয়েছে। ছেলেটিও ক্ষতবিক্ষত, তার গলার একাংশে ধারালো ছুড়ির আঘাত রয়েছে। অল্পের জন্য রক্ষ পেয়েছে শ্বাসনালী। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পটিয়া থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল আউয়াল জানান, প্রাথমিক তদন্তে প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে ওই ছাত্রীকে মাসুদ ছুরি দিয়ে হত্যা করার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এর পেছনে অন্য কোনা হাত আছে কিনা তা জানতে ছেলেটি সুস্থ হয়ে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।