এসভি ডেস্ক: আল রাস্তা শেষে ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে এক আদিবাসী বৃদ্ধা ও তাঁর মেয়ে খাবারের অভাবে ধুঁকছেন। বেশিরভাগ দিন তাদের শাকপাতা সেদ্ধ করে খেতে হয়। বালুরঘাটের চকভৃগু অঞ্চলের দক্ষিণ কুয়ারন গ্রামের শেষ প্রান্তের বাসিন্দা বৃদ্ধা আনে গুড়িয়া ও তাঁর মেয়ে রেনুকার অর্ধাহার ও অনাহারে রুগ্ণ শরীর নিয়ে কোনও মতে
চলাফেরা করেন।
অসহায় ভূমিহীন ওই পরিবারের অন্ত্যোদয় কার্ডে আছে দু’টাকা কেজি চাল। কিন্তু রেশন তোলার আর্থিক সামর্থ্য নেই। আগে ১০০ দিনের মজুরির কাজ ছিল। এখন কাজ বন্ধ। অপুষ্টিতে মা ও মেয়ের জীর্ণ দুর্বল শরীর দেখে কেউ কাজেও ডাকেন না। স্বামী গাবরেল কাউয়া বেঁচে থাকার সময় পঞ্চায়েত থেকে ইন্দিরা আবাস যোজনায় ইটের দেয়াল উঠেছিল। লিংটেল অবধি হয়েই বাড়ি শেষ। টিনের ছাউনি দিয়ে ইট বের করা ছোট দুটি ঘরে মেয়েকে নিয়ে থাকেন বৃদ্ধা আনে গুড়িয়া।
এলাকার কাটনা হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে মেয়ে রেনুকা। বৃদ্ধার কথায়, স্কুল খোলা থাকলে মিড ডে মিলে মেয়ের খাবার জুটে যায়। স্কুল বন্ধ থাকলে পুরো দিন না খেয়ে থাকতে হয়। এলাকার আশপাশের বাসিন্দারাও গরিব। ফলে লোকের বাড়িতে রোজ হাত পাততে সঙ্কোচ করেন আনে। তখন জলা থেকে কলমিশাক তুলে সেদ্ধ করে খেতে হয় মা মেয়েকে। বালুরঘাটের বিডিও সুস্মিতা সুব্বাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেনি। দুঃস্থ মা মেয়েকে কতটা কী সাহায্য করা যায়, দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিদায়ী পঞ্চায়েত সভাপতি প্রবীর রায়।
তীব্র অপুষ্টির শিকার রেনুকা ঠিক মতো কথা বলতে পারে না। স্কুলের খাতায় নাম রয়েছে। কিন্তু লেখাপড়ার মতো অবস্থা নেই। বাড়িতে নেই কোনও জলের ব্যবস্থা। বিদ্যুৎও নেই। সবুজসাথী থেকে পাওয়া সাইকেল চালাতে গিয়ে মেয়েটা হাঁপিয়ে ওঠে। এলাকার বাসিন্দা হাকিম কিস্কু বলেন, ‘‘ওদের দুরবস্থা দেখেও আমরা কিছু করতে পারি না। পঞ্চায়েতে বলেও বার্ধক্যভাতার ব্যবস্থা হয়নি। না খেতে পেয়ে শীর্ণ বৃদ্ধা জল বয়ে আনতে পর্যন্ত এক এক দিন পারেন না।’’
রবিবারের দুপুরে দক্ষিণ কুয়ারন গ্রামের শেষে পাটখেত পেরিয়ে বাঁশ ঝোপের তলায় বড়িতে গিয়ে দেখা গেল মাঝ উঠোনে শুকনো উনুন। তার উপরে কড়াই দিয়ে ঢাকা। পাশে মেয়ে রেণুকাকে নিয়ে বসে থাকা বৃদ্ধা আনেকে আর মুখ ফুটে বলতে হয়নি, গত ২৪ ঘণ্টায় ওই উনুনে ভাত চড়েনি।