Spread the love
নিজস্ব প্রতিনিধি: ১৩ বস্তা ভিজিএফ কার্ডের চাউলসহ ইউপি সদস্য  রেজাউল ইসলাম(৫২) কে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শাল্ল্যে গ্রামে এ অভিযান চালানো হয়।
তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য ও জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হত দরিদ্রদের মাঝে পরিবার পিছু ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ২০ কেজি করে চাউল বিতরণের সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী ৯নং ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নে চাউল বিতরণের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি শাওনের বাবা ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক তাহমিনা খাতুনের স্বামী ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য রেজাউল ইসলাম ভিজিএফ কার্ডের চাউল যথাযথভাবে বিতরণ না করে আত্মসাৎ করেন। এর একাংশ তিনি স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করেন। কিছু চাউল বিক্রির জন্য নিজের কাছের লোকদের বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন।
তারা আরো জানান, স্থানীয় সাংসদ এর কাছের লোক বলে পরিচিত রেজাউল ইসলামের বাড়িতে ভিজিএফ কার্ডের চাউল মজুত রয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে তার বাড়িতে অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রেজাউল কয়েক বস্তা চাউল পাশের কয়েকটি বাড়িতে সরিয়ে ফেলে নিজে চাচাত ভাই হাবিবুর রহমানের ধানের গোলার মধ্যে আত্মগোপন করেন।
পুলিশ প্রথমে রেজাউলের স্ত্রী তাহমিনা ও ছেলে ফজলে রাব্বি শাওনের উপস্থিতিতে তাদের বাড়ির রান্না ঘরের ট্রাঙ্ক থেকে তিন বস্তা চাউল, ইউপি সদস্য রেজাউলের চাচা মাওলানা গোলাম কাদেরের বাড়ি থেকে এক বস্তা, মতিয়ার রহমানের বাড়ি থেকে দু’ বস্তা, খোদাবক্সের বাড়ি থেকে এক বস্তা, অঞ্জনা রানী সরকারের বাড়ি থেকে তিন বস্তা, সুনীল দাসের বাড়ি থেকে দু’ বস্তা, কানা বিশ্বনাথ দাসের বাড়ি থেকে এক বস্তা চাউল উদ্ধার করেন।
তবে সুনীল দাস আড়াই হাজার টাকার বিনিময়ে দু’ বস্তা ও কানা বিশ্বনাথ দাস ৯০০ টাকার বিনিময়ে এক বস্তা চাউল ওই ইউপি সদস্যের কাছ থেকে কিনেছেন মর্মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানোয় তিনি ওই টাকা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে বুধবার সকালে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। চাউল উদ্ধার হলেও পালিয়ে থাকা রেজাউল ইসলামকে ধরতে উপপরিদর্শক প্রদীপ সানার নেতৃত্বে পুলিশ বাড়ি বাড়ি চিরুনি তল্লাশি অভিযান চালান। 
রাত ৮টার দিকে চাচাত ভাই হাবিবুর রহমানের ধানের গোলার ভিতর থেকে তাকে টিনে হিচড়ে বের করা হয়। এ সময় তার স্ত্রী তাহমিনাকে একাধিক জনপ্রতিনিধির কাছে জোরে জোরে মোবাইল করতে দেখা যায়। কিন্তু চুরির দায় ঘাড়ে পড়া কোন আওয়ামী লীগ নেতা নেত্রীর পক্ষে কোন জনপ্রতিনিধিকেই সাড়া দিতে দেখা যায়নি।
একপর্যায়ে যে জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সার্বক্ষণিক সময় দেন তিনিই তার আহবানে সাড়া না দেওয়ায় হতাশ হন তাহমিনা। পুলিশ যখন স্বামী রেজাউলকে গাড়িতে তুলছিল তখন তাহমিনাকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। লজ্জায় মুখ ঢাকছিলেন রেজাউল। কয়েক’শ মানুষের মাঝে এমন দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।
তবে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক তাহমিনা খাতুন জানান, তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৩৮৭ কেজি ১২০ গ্রাম চাউল উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলামকে। চালসহ ওই ইউপি সদস্যকে থানায় আনা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বা ইউপি সচিব আমিনুর রহমান বা চৌকিদার আফছার আলী বাঁদি হয়ে নিয়মিত মামলা দায়ের করবেন। তাকে বুধবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হবে।