Spread the love

এসভি ডেস্ক: ভারতের কেরালায় গত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়, সেখান থেকে অসহায় মানুষদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে দ্রুত। উদ্ধারকর্মীরা হেলিকপ্টার ও নৌকার মাধ্যমে বন্যাকবলিত মানুষদের স্থানান্তরের কাজ করছেন।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের পক্ষ থেকে টুইটারে জানানো হয়েছে, কেরালায় গত ৯ দিনে বন্যায় মারা গেছে ৩২৪ জন মানুষ। ১৫ শতাধিক ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন দুই লাখ ২৩ হাজার ১৩৯ জন। রাজ্যজুড়ে পানির স্তর ক্রমশ বাড়তে থাকায় ৮০টি বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে। এবারের বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির ফলে নজীরবিহীন বন্যা তৈরী হয়। ফলশ্রুতিতে প্রাণহানীর পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও অত্যন্ত প্রবল।

ভারতের বেসরকারি টেলিভিশন এনডিটিভি জানিয়েছে, কেরালা বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে কাজ করছে ভারতীয় নৌবাহিনীর ৪২টি, সেনাবাহিনীর ১৬টি, উপকূলরক্ষী বাহিনীর ২৮টি এবং এনডিআরএফের ৩৯টি দল। সেনাবাহিনীর ২০০টি নৌকা, চারটি বিমান এবং কোচিতে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর তিনটি জাহাজ কাজ করছে।

রাজ্যের ১৪টি জেলার মধ্যে ১৩টি জেলাতেই চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। কেরালার তিরুঅনন্তপুরম-কোট্টায়ম-এরনাকুলাম এবং এরনাকুলাম-শোরানুর-পালাক্কড় রেলওয়ে বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় রেল ট্র্যাক পানির তলায় চলে গেছে। কোথাও কোথাও আবার পানির তোড়ে পুরো রেল ট্র্যাকটাই হারিয়ে গিয়েছে।

 

কেরালার আলাপুঝা, এরনাকুলাম, ত্রিশুর, চালাক্কুড়ি, কোচি, পতনমথিট্টায় জারি করা হয়েছে কড়া সতর্কতা। গতকাল নতুন করে ধস নেমেছে ইডুক্কি, মালাপ্পুরম এবং কান্নুর জেলায়। একনাগাড়ে বৃষ্টির ফলে কেরালার বিভিন্ন জেলার ত্রাণশিবিরিগুলোতেও পানি ঢুকতে আরম্ভ করেছে। ফলে ত্রাণশিবির থেকে দুর্গতদের সরিয়ে আনতে পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত নৌকা এবং হেলিকপ্টার।

কেরালার পম্পা নদী প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় সবরোমালা মন্দিরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কেরালাগামী সমস্ত ঘরোয়া ফ্লাইটের টিকিটের দাম কম রাখতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। আগামী এক সপ্তাহের জন্য কেরালার সমস্ত ফোনকল এবং ডাটা পরিষেবা বিনামূল্যে করার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রণালয়।

কোচির বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে ডুবে গেছে। কোচির মেট্রো পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাহত বাস পরিষেবাও। রানওয়েতে পানি জমে যাওয়ায় আপাতত কোচি বিমান বন্দর থেকে বিমান ওঠানামা করছে না ।

 

মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, পরিস্থিতি খুবই গুরুতর হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধার কাজে আরও বেশি করে কেন্দ্রীয় সাহায্য চেয়েছি।

প্রধানমন্ত্রীও টুইট করে জানিয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি রাজ্যের মানুষের জন্য প্রার্থনা করেন। এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে আজ সকালে কেরালা গেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত চলবে বৃষ্টি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করে কোমর বাঁধছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। গতকাল উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে ঠিক হয়, কেরালায় ভয়াবহ বন্যায় উদ্ধার কাজে গতি আনতে ভারতীয় সেনার তিনটি বিভাগ, উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে আরো বেশি জিনিসপত্র দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। ফলে এদিন নতুন করে কেরালায় এক হাজার ৩০০টি লাইফ জ্যাকেট, ৫৭১টি লাইফবোট, এক হাজার রেইনকোট, এক হাজার ৫০০টি শুকনো খাবারের প্যাকেট, এক হাজার ২০০টি রান্না করা খাবারের প্যাকেট, ২৫টি মোটরচালিত নৌযান এবং নয়টি নৌকা পাঠানো হয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় কেরালার বন্যা দুর্গত এলাকায় ভারতীয় নৌসেনার ১৬টি বিমানে করে লক্ষাধিক খাবারের প্যাকেট ফেলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, কেরালা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত ১ জুন থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে দুই লাখ আট হাজার ৭৬৭ মিলিমিটার। যা রাজ্যের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের থেকে ৩০ শতাংশের ওপর অতিক্রম করে গেছে।