এসভি ডেস্ক: আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা করলে আমরা কি চুমু খাব?’ নিজের এই বক্তব্যের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের । তিনি বলেছেন, ‘চুমুর কথা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। এ বক্তব্যে কেউ কষ্ট পেলে তাতে আমি দুঃখিত।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাজনীতিতে এ ধরনের শব্দ ব্যবহার হয় কিন্তু আমার কাছে কেউ এমনটা আশা করে নাই।’
রোববার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, ‘রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেউ আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে গুলি করতে করতে আসলে তাদেরকে বল প্রয়োগ না করে চুমু খাবে নাকি?’ রোববার সকালে বনানীতে শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে তার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেছিলেন। একই দিন বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি ওই কথার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে বিএনপির অবস্থানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম আমির খসরুর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি অরাজনৈতিক একটা আন্দোলনকে রাজনৈতিক রঙ-রূপ দিতে চলেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম সেই বক্তব্যে সমর্থন দিয়ে তা প্রমাণ করলেন।
আন্দোলনকে ঘিরে ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে ঘিরে বিএনপির ষড়যন্ত্র প্রমাণ হয়েছে। এটা এখন আর কোনও গোপন বিষয় নয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোটা আন্দোলনে সুবিধা করতে না পেরে বিএনপি এখন শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনে সওয়ার হয়েছে। আমরা এটাও এখন মনে করছি, যে মেয়েটা বলেছিল আওয়ামী লীগ অফিসে আমি ধর্ষিত হচ্ছি, আমাকে বাঁচান। আমরা এখন বিশ্বাস করছি, এই ভিডিও পোস্টের সঙ্গে বিএনপি জড়িত। আওয়ামী লীগ অফিসে যে হামলা হয়েছিল তার সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলামের দলের সংযোগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা করার জন্য বিএনপি জামায়াত তাদের ছাত্র সংগঠনকে দিয়ে আক্রমণ সাজিয়েছিল। আজকে আওয়ামী লীগ অফিসের পেছন থেকেও আক্রমণ করার চেষ্টা হয়েছিল। এটা আপনারাসহ (সাংবাদিক) অনেকেই দেখেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ অফিসে হামলার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বারবার বলেছেন শিক্ষার্থীদের ওপর বল প্রয়োগ করা যাবে না। কিছুক্ষণ আগেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা উপদেশ চেয়েছিলাম। তিনি আমাদের অল্প কথায় বলেছেন এ পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে। এই দু’টি শব্দই তিনি বলেছিলেন।
নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখন ধৈর্য ধরতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে কোনও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি যদি হতে হয় সেজন্য সতর্কভাবে সবাইকে অপেক্ষা করার জন্য আহ্বান করছি। এখানে কোনোভাবে আমরা আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত হতে চাই না। আমরা ক্ষমতায় আছি, আমরা দেশের শান্তি চাই। ক্ষমতায় থেকে অশান্তি কেন চাইবো? তাই আমাদের নেতাকর্মীদের যদি কোনও প্রকার প্রতিকূল পরিস্থিতি আসে তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমরা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। বিএনপি-জামায়াত আজ পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তাই কোনও চক্রান্ত করে লাভ হবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আন্দোলনকারীরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। গতকাল যা ছিল, আজকে দুই একটি জায়গা ছাড়া শিক্ষার্থীরা কোথাও রাস্তায় অবস্থান নেয়নি। তারা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পড়াশোনার জন্য ঘরে ও ক্যাম্পাসে ফিরে গেছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, আগামীকাল সড়ক পরিবহন আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হবে। পরবর্তীতে এটা সংসদে পাস হবে। এরপর নয় দফা দাবির যেগুলো আইনি কারণে বাস্তবায়ন হয়নি তাও হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা অক্ষরে-অক্ষরে পালন করবেন।