Spread the love

এসভি ডেস্ক: ‘এই আপনি এখানকার ভোটার? ভোট দিছেন?’

‘না, আমি নৌকার লোক স্যার’

‘তাহলে আপনি এখানে কী করেন? বের হন। না হলে কিন্তু ধরে গাড়িতে তুলব।’

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২১নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ আব্দুল মান্নান ডিডিএফ সিনিয়র হাফেজি মাদরাসা কেন্দ্রে বিজিবির একজন কর্মকর্তা নৌকার একজন নারী সমর্থককে এমনভাবে জেরা করার পর কেন্দ্র থেকে বের করে দেন।

সোমবার সকাল দশটার পর এই প্রতিবেদকের সামনেই এমন ঘটনা ধরা পরে। এই কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হচ্ছে। মোট ভোট দেবেন দুই হাজার ২৮৬জন নারী ভোটার।

সকালে অন্যান্য কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় খবর আসে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের উল্লেখিত কেন্দ্রে ঝামেলা হচ্ছে। খবর পেয়ে যাওয়ার পর দেখা যায়, ভেতরে ভোটাররা ঠিকঠাকমত ইভিএমে ভোট দিলেও একজন নারী ঘুরে ঘুরে ভোটারদের কানে কানে একটি প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য বলে দিচ্ছেন।

কখনো বুথের মধ্যে ঢুকেও এই নারীকে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

বিষয়টি নিয়ে কিছু ভোটার প্রতিবাদ করলেও তেমন কোনো সাড়া পাচ্ছিলেন না। প্রিজাইডিং কর্মকর্তাও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন না।

হঠাৎ বিজিবির দুই জন কর্মকর্তা কয়েকজন গার্ড নিয়ে কেন্দ্রের মধ্যে ঢোকেন। এসেই দ্বিতীয় তলায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আল আমিন সরোয়ারের রুমে চলে যান তারা।

এই কেন্দ্রে সব প্রার্থীর এজেন্ট নেই এমন অভিযোগ শুনে তারা এই কেন্দ্র পরিদর্শনে আসছেন জানালে- প্রিজাইডিং কর্মকর্তা অভিযোগ অস্বীকার করলে তাকে নিয়ে বুথ পরিদর্শন করতে নিয়ে আসেন বিজিবির কর্মকর্তারা। বলেন, ‘চলুন গিয়ে দেখি ঠিক আছে কি না আপনার কথা।’

পরে গিয়ে একটি বুথে ধানের শীষ ছাড়া অন্য সব মেয়র প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতি দেখতে পান।

এরপরই বুথের বাইরে বের হয়ে সেই নারীর কাছে জানতে চান তিনি এখানকার ভোটার কি না। ‘হ্যাঁ’- এই জবাব আসার পর প্রশ্ন, ‘ভোট দিছেন কি না।’

‘না এখনো দেইনি’- নৌকার ওই নারী কর্মী। ‘দ্রুত ভোট দিয়ে চলে যান’-বিজিবি কর্মকর্তা।

‘আমি এজেন্ট’- নারী কর্মী।

‘এজেন্ট, তো আপনি বাইরে ঘুরছেন কেন?’-বিজিবি কর্মকর্তা।

তখন এক কর্মকর্তার কানে কানে ওই নারী কর্মী বলেন, ‘আমি নৌকার লোক।’

সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেপে গিয়ে বিজিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘দ্রুত বের হন। ত্রিসীমানায় যেন না দেখি।’

তখন পাশে দাঁড়ানো আর এক বিজিবি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই নারী পুলিশ নেই এখানে? ওনাকে ধরো। গাড়িতে তোলো।’

এ সময় পাশে লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজন নারী ভোটার বিজিবির কর্মকর্তা কর্নেল তৌহিদকে বলেন, ‘এই মহিলা ডিস্টার্ব করতেছে। খালি ঘোরে আর সবাইরে নৌকায় ভোট দিতে বলে।’

পরে দ্রুত সেই নারী কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যান।

অন্য একটি বুথে ঢুকে কারো কোনো সমস্যা আছে কি না জানতে চান বিজিবির কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। এসময় তাকে একজন কমিশনারের এজেন্ট পেছনের অন্য একজন কমিশনারের এজেন্ট তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ করেন।

সঙ্গে সঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই শোনেন, যা হয়েছে এখানেই শেষ। এমনটা আবার শুনলে শুধু ধরব, আর টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলব।’

‘কোনো ঝামেলা করা যাবে না। জাল ভোট, কাউকে ভোট দিতে হেল্প করার কোনো সুযোগ নেই।’