Spread the love

এস ভি ডেস্ক: কাশ্মীরই দু’দেশের মধ্যে সব চেয়ে বড় সমস্যা। সেই সমস্যা মেটানোর লক্ষ্যে ভারত এক পা এগোলে তিনি দু’পা এগোতে রাজি। কিন্তু তাঁর দাবি, এখন চেষ্টাটা নেহাতই একপেশে। কারণ, ভারত শুধুই দোষারোপ করে যায়।

পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়া যখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা, তখন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় নরমে-গরমে ভারতকে এমনই বার্তা দিলেন ইমরান খান। বললেন, ‘‘গত ৩০ বছর ধরে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। পাকিস্তানি ও ভারতীয় নেতৃত্বের এক টেবিলে বসে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা উচিত।’’

ইমরান যখন এই বক্তৃতা দিচ্ছেন, তখন নওয়াজ় শরিফের পিএমএল-এনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ আসনে এগিয়ে তাঁর দল তেহরিক-এ-ইনসাফ (পিটিআই)। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ঘোষিত ১৯৪টি আসনের মধ্যে পিটিআই জিতেছে ৯৮টি আসনে, সেই সঙ্গে আরও ২০টি আসনে এগিয়ে তারা। পিএমএল-এন জিতেছে ৪৯টিতে, এগিয়ে ১৪টিতে। বিলাবল ভুট্টো জ়ারদারির পিপিপি মাত্র ২৩টি আসনে জিতেছে, এগিয়ে ২০টিতে। ব্যাপক রিগিংয়ের অভিযোগ তুলেছে পিএমএল-এন, পিপিপি-সহ বেশ কয়েকটি দল। ইউসুফ রাজা গিলানি, শাহিদ খকন আব্বাসির মতো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীরা হেরেছেন। ভারত সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব এ নিয়ে চুপ থাকলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আর কে সিংহ বলেছেন, ‘‘সাজানো ভোট। ইমরান আগাগোড়াই সেনাবাহিনীর প্রার্থী।’’

চারটি প্রাদেশিক আইনসভার মধ্যে পঞ্জাবে পিএমএল-এন, সিন্ধুপ্রদেশে পিপিপি, খাইবার পাখতুনখোয়ায় পিটিআই ক্ষমতা দখলের পথে। ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি বালুচিস্তানে। গত কালের হামলার জেরে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির দু’টি আসনে গণনা স্থগিত রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোট দলগুলির সমর্থন নিয়েই ম্যাজিক সংখ্যা ১৩৭ পেরিয়ে যাবেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেট অধিনায়ক। তবে সেই দলগুলির মধ্যে কট্টরপন্থীদের উপস্থিতির সম্ভাবনা কম। কারণ, জনতা বিমুখই করেছে তাদের। ২৬/১১ হামলার পাণ্ডা হাফিজ সইদ ঘুরপথে আড়াইশোরও বেশি প্রার্থী দিলেও তারা কেউ জিতেছে বলে খবর নেই।

ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইমরান বলেছিলেন, ‘‘আমি নওয়াজ় নই। আমি সেনার পাশে দাঁড়াই।’’ ভারতীয় গোয়েন্দাদের একাংশেরও বক্তব্য, সেনার হাতের পুতুল হয়ে থাকবেন ইমরান। আজকের বক্তৃতায় ইমরান অবিমিশ্র ভারত-প্রীতির কোনও বার্তা দেননি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদতের অভিযোগ এড়িয়ে তিরটা ঘুরিয়ে দিয়েছেন ভারতের দিকে। বলেছেন, ‘‘দুনিয়ার যেখানে যা হচ্ছে, তার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা হচ্ছে। এই দোষারোপ যদি চলতে থাকে যে, পাকিস্তানই সব (সন্ত্রাস) করছে… ও দিকে পাকিস্তানও মনে করে, বালুচিস্তানে ভারত কলকাঠি নাড়ছে— তা হলে তো একই জায়গায় আটকে গেলাম। ভারতের নেতৃত্ব তৈরি থাকলে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে আমিও তৈরি।’’

কাশ্মীর নিয়ে ‘কাপ্তান’-এর বক্তব্যে তাই নতুন কিছু দেখছেন না অনেকেই। বরং যে ভাবে পাক সেনার তরফে টুইট করে সুষ্ঠু ভোটের জন্য জনতাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে, ‘পাকিস্তানের জয়’-এর কথা বলা হয়েছে— তারও কোনও সাম্প্রতিক নজির মিলছে না। অনেকেরই প্রশ্ন, এই কথাগুলো তো বলবে সরকার বা নির্বাচন কমিশন! সেনা কেন?

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকেও একহাত নিয়ে ইমরান বলেছেন, ‘‘ওঁরা আমায় এমন ভাবে দেখালেন, যেন আমি বলিউডের ভিলেন। যেন ইমরান খান ক্ষমতায় এলে ভারতের পক্ষে যা যা খারাপ, সে সবই ঘটবে। ক্রিকেটের সূত্রে ভারতে আমার যা চেনা-পরিচিত আছে, তার কারও নেই।’’ বক্তৃতায় ভারত-পাক বাণিজ্যে জোর দিয়েছেন ইমরান। বলেছেন, দু’দেশের ‘দোস্তি’ হওয়াটা উপমহাদেশের পক্ষে খুব জরুরি। কিন্তু এর পাশাপাশিই চিনকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে বলেছেন, দারিদ্র ও দুর্নীতি-দূরীকরণের লক্ষ্যে চিনা মডেলই অনুসরণ করবেন তিনি।

কেমন হবে তাঁর পাকিস্তান? ইমরান বলেছেন, ‘‘মদিনার মতো। যেখানে দুর্বল ও স্বামীহীনাদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে। যে রাষ্ট্রের নীতি তৈরি হবে গরিবের জন্য।’’ প্রাসাদের আরামে থাকতে চান না প্রধানমন্ত্রী ইমরান। তিনি উঠে যেতে চান মন্ত্রীদের আবাসনে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনটিকে ব্যবহার করতে চান একটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বা কল্যাণমূলক কোনও কাজের ঠিকানা হিসেবে।