বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকা পরিদর্শন শেষে সোমবার বিকেলে দুদকের দিনাজপুর অঞ্চলের উপপরিচালক বেনজীর আহম্মেদ সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
কয়লা লোপাটের ঘটনা তদন্ত করতে দুপুরে কয়লা খনি পরিদর্শনে যান বেনজীর আহম্মেদসহ দুদক দিনাজপুর অঞ্চলের একটি দল। প্রাথমিক তদন্তে তারা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।
তদন্ত শেষে বেনজীর আহম্মেদ বলেন, কয়লা উত্তোলনের অফিশিয়াল রেকর্ড অনুয়ায়ী বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ইয়ার্ডে ১ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন কয়লা থাকার কথা। কিন্তু আমরা পেয়েছি মাত্র দুই হাজার মেট্রিক টন। এই কয়লা কিভাবে উধাও হলো আর কারা এ জন্য দায়ী, বিষয়টি তদন্তে নেমেছে আমাদের টিম। পুরো তদন্তে শেষ হলে রাষ্ট্রিয় সম্পদ তছরুপের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে সরেজমিনে তিনি নিজেই তদন্তে আসেন জানিয়ে দুদকের আঞ্চলিক উপপরিচালক বলেন, ঘটনাটিকে আমার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ঘটনাস্থল থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে তদন্তে যা পাওয়া গেছে, তা দুদক প্রধান কার্যালয়কে জানানো হয়েছে।
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উত্তোলিত কয়লার মজুদ থাকার কথা প্রায় দেড় লাখ টন। কিন্তু সেখানে কয়লা আছে মাত্র পাঁচ-ছয় হাজার টন। এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার কোনো হদিস মিলছে না। গায়েব কয়লার বাজার মূল্য প্রায় ২২৭ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিপুল পরিমান কয়লা একদিনে লোপাট হয়নি। দীর্ঘদিনের জেরেই এই গায়েবের ঘটনাটি ধরা পড়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার টন কয়লা খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটি টাকা।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে খনির ইয়ার্ডে প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা থাকার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র পাঁচ-ছয় হাজার টন কয়লা থাকে। অর্থাৎ এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার হদিস নেই। কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে বিষয়টি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) পেট্রোবাংলাকে জানায়। তখনই কয়লা উধাও হওয়ার ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আসে। কয়লা সংকটের কারণে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল রোববার রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে চালু থাকা একটি ইউনিটের কাজও বন্ধ হয়ে যায়।
খনির কূপে উত্তোলনযোগ্য কয়লার মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় যন্ত্রপাতি সংস্থাপন ও স্থানান্তরের জন্য বড়পুকুরিয়ায় গত ২৯ জুন থেকে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পুনরায় কয়লা উত্তোলন শুরু হবে আগস্ট মাসের শেষে। কোল ইয়ার্ডে নতুন মজুদ যোগ না হওয়ায় এই বিপুল পরিমাণ ঘাটতির বিষয়টি ধরা পড়ে। এ বিষয়টি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) পেট্রোবাংলাকে জানালে কয়লা উধাও হওয়ার ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আসে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কয়লা উত্তোলনের রেকর্ড ঠিক রাখালেও ইয়ার্ড থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধপথে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খালাস হয়েছে বাড়তি কয়লা। স্তুপকৃত কয়লার নিরীক্ষণ ও তদারকি না থাকাতেই অল্প অল্প করে পাচার করা কয়লা এখন বড় ঘাটতি তৈরি করেছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা ঘাটতির বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।
এদিকে এ খনিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে জাতীয় গ্রিডে দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ ঘাটতি।
কয়লা লোপাটের ঘটনায় এরই মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপমহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড সিরাজগঞ্জে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খানকে। পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) কামরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।